প্রবাদে আছে ‘কাক হয়ে কাকের মাংস খায়না’। কিন্তু শেরপুরের গণমাধ্যম অঙ্গনে এ প্রবাদটি দিন দিন কেন যেন মিথ্যায় পর্যবসিত হয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে শেরপুর প্রেস ক্লাবের নির্বাচনে একাধিকবার পরাজিত হয়ে আদিল মাহমুদ উজ্জল নামের এক গণমাধ্যমকর্মী প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে সম্মানিত গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে নানা মহলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। প্রতিহিংসাপরায়ন এহেন হীনমনের গণমাধ্যমকর্মী উজ্জলের কৃতকর্মের প্র্রতিবাদে বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝড় ওঠেছে। সাংবাদিকদের নিয়ে জনগনের মধ্যে বারবার হাস্যকর পরিবেশের সৃষ্টি করে চলছে এই গণমাধ্যমকর্মী।
তারই ধারাবাহিকতায় এবার সে প্রেস ক্লাবের দুই দফায় নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিনসহ সিনিয়র ১২ জন গণমাধ্যম কর্মীর বিরুদ্ধে শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি গণমাধ্যম অঙ্গনে জড়িত থাকায় দ্বৈত পেশার অভিযোগ তুলে শেরপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেন। একই সাথে তিনি তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের অযৌক্তিক দাবী তুলেন। পরে জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তারের নির্দেশে বিষয়টি তদন্ত করতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান ওই ১২ গণমাধ্যমকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন, যদিও নোটিশ গুলো আজও কারো হাতে পৌঁছায়নি। তবে অতিউৎসাহী ওই গণমাধ্যমকর্মীসহ তার অনুসারী কয়েকজন তাদের ফেইসবুকে নোটিশটি ছড়িয়ে শিক্ষক ও সাংবাদিক সমাজকে কলংকিত করতে মরিয়া হয়ে উঠে।
এ বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মী আদিল মাহমুদ উজ্জলসহ তার অনুসারী কতিপয় গণমাধ্যমকর্মী বিভ্রান্তিমূলক খবর পরিবেশনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বিষোদগারে মেতে উঠেছে। এ নিয়ে শেরপুর জেলার গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে, প্র্রতিবাদে বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝড় ওঠেছে।
এদিকে সারাদেশেই এমপিওভূক্ত শিক্ষকরা যুগযুগ ধরে অনেকটা শখের বশেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি করে আসছেন। জেলা ও উপজেলা তথা মফস্বল পর্যায়ে বেতনবিহীন অবস্থায় দেশ ও জাতির কল্যাণে লেখালেখি করে আসছেন। এসব শিক্ষকরা নিয়মিত তাদের দায়িত্ব পালন করার সময়কালীনের আগে বা পরে অবসরকালীন সময়ে লেখা-লেখি করে থাকেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান, কমিটি ও সংশ্লিষ্ঠ উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না থাকলেও, দায়িত্ব পালনে ফাঁকি দেয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলে শিক্ষক ও সাংবাদিকদের হেয় করছেন এমন এক লোক যারনাকি প্রতিষ্ঠানের সাথে কোন প্রকার সংশ্লিষ্ঠতা নেই। এতে করে সারাদেশ ব্যাপী সংশ্লিষ্ঠ সকল প্রতিষ্ঠানের প্রধান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদকে কৌশলে তাদের দায়িত্বে অহবহেলা আছে মর্মে ইঙ্গিতা করা হয়েছে। তানা হলে সরাসরি সংশ্লিষ্ঠ থেকেও তারা কেন বিষয়টি এতোদিন সামনে আনেনি। এনিয়ে অভিভাবক, এলাকাবাসী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
জানা যায়, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির প্রতিনিধি শিক্ষক মো. মেরাজ উদ্দীন, আল সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার প্রতিনিধি শিক্ষক সাবিহা জামান শাপলা, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিনিধি শিক্ষক মো. মোশারফ হোসাইন, দৈনিক আজকের বসুন্ধরা পত্রিকার প্রতিনিধি শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রতিনিধি সুপার মোহাম্মদ হযরত আলী, দ্যা নিউন্যাশন পত্রিকার প্রতিনিধি প্রভাষক মো. রফিকুল ইসলাম, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিনিধি প্রভাষক মাসুদ হাসান বাদল, এসএ টিভি ও দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকার প্রতিনিধি প্রভাষক মহিউদ্দিন সোহেল, দ্যা ডেইলি ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার প্রতিনিধি প্রভাষক ড. মোহাম্মদ আনিসুর রহমান আকন্দ, দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার প্রতিনিধি প্রদর্শক আব্দুল মোত্তালিব সেলিম, দৈনিক পল্লীকন্ঠ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিনিধি প্রভাষক রীতেশ কর্মকার, দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিনিধি প্রভাষক মো. মোক্তারুজ্জামান। এরা সবাই নাকি শিক্ষকতার পাশাপাশি লাভজনক পেশা সাংবাদিকতায় জড়িত। যা শিক্ষিত সমাজে হাস্যকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। কারন মফস্বলের সাংবাদিকতা যে কোন লাভ জনক পেশা নয়, এটাও ওই অভিযোগকারী জানেন না। গণমাধ্যমকর্মীদের কেউই গণমাধ্যম অঙ্গনে লাভজনক পদে জড়িত নন। সরকারের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আছে এমন প্রতিষ্ঠানেও কাজ করছেন না। শেরপুর তথা দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার কোন গণমাধ্যম কর্মীই লাভজনক কোন পদের সাথে জড়িত নন। এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী ও প্রাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জুলফিক্কার আলী জানান, সংবিধানে লাভজনক পদের ব্যাখ্যা নেই। তা আছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) এর ১২ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বা সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষ বা ৫০ শতাংশের বেশি সরকারি শেয়ার সম্বলিত কোম্পানীর চাকরি বা পদকে লাভজনক পদ বলা হয়েছে। অন্যদিকে ২০০১ সালে আদালতের এক রায়ে বলা হয়, যে পদে নিয়োগ ও পদচ্যুতির ক্ষমতা সরকারের হাতে, সে পদ লাভজনক পদ। গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়োগ বা পদচ্যুতির ক্ষমতা সরকারের হাতে নেই। কাজেই মফস্বল পর্যায়ের গণমাধ্যম কর্মীরা কোন অবস্থাতেই লাভজনক পদে কর্মরত নেই। একইসাথে বেসরকারী শিক্ষকরা মিডিয়ায় লেখালেখি করতে পারবেন না, এমন নির্দেশনা বা প্রজ্ঞাপন শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আদৌ প্রকাশ করা হয়নি।
এবিষয়ে আইনজীবী জুলফিক্কার আলী প্রশ্ন করে বলেন, শিক্ষা অফিসার কোন বিধি বলে ১২ গণমাধ্যমকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন? ওই ১২ গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ৬ জন শিক্ষকই প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার। যাদেরকে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা নোটিশ দেয়ার এখতিয়ার রাখেন না।
এদিকে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, অভিযোগকারী আদিল মাহমুদ উজ্জল ইতিপূর্বে প্রেস ক্লাবের বিভক্তি কর্মকান্ডে জড়িত থেকে ক্লাবের প্রায় ৫০ হাজার টাকা আত্মসাত করেন। যা পরবর্তীতে শিক্ষক সাংবাদিকদের তৎপরতায় তিনি জেলার দায়িত্বশীল শীর্ষ মহলের উপস্থিতিতে ফেরত দিতেও বাধ্য হন। এছাড়া তিনি ইতিপূর্বে প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবিহা জামান শাপলার বিরুদ্ধে এমন অযৌক্তিক অভিযোগ আনলেও তদন্তে তা মিথ্যা বলে প্রতিয়মান হয়। এছাড়া বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধেও বিভিন্নস্থানে একাধিক মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেও সে তার উদ্দেশ্য সফল করতে পারেনি।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবিহা জামান শাপলা বলেন, পূর্বের ন্যায় আবারো প্রেসক্লাবের ঐক্যকে বিনষ্ট করার জন্য আদিল মাহমুদ উজ্জল ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। তার কর্মকান্ডে এটাই প্রতিয়মান হচ্ছে। তবে এবার তাকে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে ব্যবস্তা গ্রহণ করার জন্য প্রেসক্লাব কর্মকর্তাদের কাছে দাবী জানাচ্ছি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে শেরপুর প্রেসক্লাবের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন বলেন, আমি এখনো কারণ দর্শানো নোটিশ হাতে পাইনি। তবে দুইবার আদিল মাহমুদ উজ্জল আমার সাথে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করে গোহারা হেরে নির্লজ্জভাবে ক্লাবের যুগ্মসম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছেন। আবার ওই পদ ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে আসছেন। এটা নতুন কিছু নয় এর আগেও আমার বিরুদ্ধে সে সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আমার প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করেছে। এছাড়াও ক্লাবের একাধিক কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও তার উদ্দেশ্য সফল করতে পারেনি। তবে এবার তিনি যা করেছেন, সেটা ক্লাবের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ। তাই বিষয়টি ক্লাবের সভাপতি মো. শরিফুর রহমানের নিকট অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান বলেন, অভিযোগ দিয়ে অভিযোগকারী তার কয়েকজন লোকজন নিয়ে আমাদেরকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছিলো। তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমি কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। আমি কারোর বিরুদ্ধেই বিধি পরিপন্থী কোন কিছু করবোনা।