বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
ফুল ও গাছের চারা বিক্রি করে বছরে সঞ্চয় লাখ টাকা নকলায় জিয়া মঞ্চ’র উপজেলা কমিটি গঠন বিষয়ক আলোচনা সভা শেরপুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রনে ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে মতবিনিময় নকলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নাতির পর মারা গেলেন নানি কৃষি বিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে উপজেলা জুড়ে তালগাছ ৪ ডিসেম্বর ঝিনাইগাতী মুক্ত দিবস বাংলাদেশের চিলমারীর রিকতা বিশ্বের প্রভাবশালী নারীদের তালিকায় নকলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নাতী নিহত, নানী আহত নকলায় প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা পুরষ্কার বিতরণ বর্ণাঢ্য আয়োজনে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন

সারা বছর উচ্চমূল্যের নিরাপদ ফসল উৎপাদনে পলিনেট হাউজের জুড়ি নেই

মো. মোশারফ হোসাইন:
  • প্রকাশের সময় | রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২২
  • ১২৮ বার পঠিত

উচ্চমূল্যের নিরাপদ ফসল উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনকারী নতুন একটি প্রযুক্তি হচ্ছে পলিনেট হাউস। সারা বছর উচ্চমূল্যের নিরাপদ ফসল উৎপাদনে পলিনেট হাউজের যেন জুড়ি নেই।

শেরপুরের নকলা উপজেলাসহ নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলায় প্রথমবারের মতো এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এতে সফলতার মুখ দেখেতে পাচ্ছেন কৃষক।

এ হাউজে আদ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সারা বছর উচ্চমূল্যের ফসল সহজেই উৎপাদন করা যায়। হাউজের চারপাশে নেট ও উপরে পলিথিনের ছাউনি থাকায় ফসলে ক্ষতিকর পোক মাকড় আক্রমণ করতে পারেনা। তাছাড়া উপরে পলিথিন ব্যবহার করায় স্বাভাবিক কারনেই রাসায়নিক সার ব্যবহারের খুব বেশি প্রয়োজন হয়না। তাই কৃষকরা এখানে রাসায়নিক সার ব্যবহার করেননা। ফলে এ পদ্ধতিতে সারা বছর উচ্চ মূল্যের বিভিন্ন ফসল উৎপাদনসহ শাক সবজির সুস্থ সবল রোগমুক্ত চারা উৎপাদন করা সম্ভব।

পলিনেট হাউজ পদ্ধতি ব্যবহারে অল্প শ্রমে, স্বল্প ব্যয়ে সহজেই নিরাপদ শাক সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছেন। এখানে উৎপাদিত শাক সবজি ও অন্যান্য ফসল নিরাপদ হওয়ায় চাহিদা বেশি। আর চাহিদা বেশি থাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন।

এমন একজন কৃষক হলেন নকলা পৌরসভার চরকৈয়া এলাকার মো. ফরিদুল ইসলাম। তার সফলতা দেখে স্থানীয় অনেক কৃষক উচ্চমূল্যের নিরাপদ ফসল উৎপাদনে পলিনেট হাউজ পদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহী হয়েছেন, উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন আরো অনেকে।

নিজের গৃহপালিত গরুর গোবরসহ নানা জৈব সার প্রয়োগ করে পলিনেট হাউসে নিরাপদ শাক সবজি, বিভিন্ন ফসল ও চারা উৎপাদন করতে পরায় কৃষকরা এতে আগ্রহী হয়েছেন। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে নিরাপদ কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আগামীতে বিপ্লব ঘটবে বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকসহ কৃষি কর্মকর্তাগন।

নকলা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি পলি নেট হাউজ নির্মাণ করতে প্রায় ১৬ লাখ টাকা করে ব্যয়ে হয়েছে। এসব হাউজে সারা বছর উচ্চমূল্যের নিরাপদ শাক সবজি, বিভিন্ন ফসল ও ফসলের চারা উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।

পলিনেট হাউজে বছরব্যপি উচ্চমূল্যের ফসল যেমন- টমেটো, ক্যাপসিকাম, ব্রুকলি, রকমেলন, রঙিন তরমুজ, ফুলকপি ও বাধাকপি, লেটুসসহ বিভিন্ন শাক সবজি ও কৃষি চারা উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

কৃষক ফরিদুল ইসলাম ১০ শতাংশ জমিতে পলি নেট হাউজ পদ্ধতিতে নিরাপদ শাক সবজি, বিভিন্ন ফসল, ফল ও সবজির চারা উৎপাদন করছেন। এর সফলতা দেখে দেশের সর্বত্র এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারলে দেশের সকল এলাকার কৃষকরা এটার সুফল ভোগ করবেন। তাতে একদিকে যেমন সারা বছর সব ধরনের শাক সবজি পাওয়া যাবে, অন্যদিকে চাষীরা লাভবান হবেন। আর ভোক্তারা পাবেন নিরাপদ শাক সবজি ও বিভিন্ন ফসল; এমনটাই মনে করছেন কৃষকসহ সব পেশাশ্রেণীর জনগন।ফরিদুলের পলিনেট হাউজে সরেজমিনে গিয়ে তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, আধুনিক এই পলিনেট হাউজে প্লাস্টিক ট্রেপে মাটির পরিবর্তে নারিকেলের ছোবরায় তৈরি কোকোপিটে চারা উৎপাদন করা হয়। এতে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ফলে এখানে সাধারণত ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না।

ফরিদুল জানান, তার এ হাউজে এরইমধ্যে বিভিন্ন কৃষি ফসলের অগণিত চারা উৎপাদন করে বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া এখানে সারা বছর নিরাপদ শাক সবজি ও বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছেন তিনি। তিনি বলেন, এই পলিনেট হাউজটি কৃষি বিভাগ থেকে পরীক্ষা মূলক ভাবে চালু করা হয়েছে। আমিসহ অনেকেই এতে খুব খুশি। তিনি আরো বলেন, আমি পলিনেটে অসময়ের সবজি চাষ ও চারা উৎপাদন করে সুফল পেয়েছি। আগাম সবজি চাষের জন্য অনেকে আমার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করছেন। অসময়ে বিভিন্ন নিরাপদ শাক সবজি ও বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করায় সেগুলো বিক্রি করে উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন। ক্রেতারা বেশি দামে শাক সবজিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য কিনে নেওয়ায় লাভবান হচ্ছেন ফরিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি ৫ শতাংশ জমিতে চারা উৎপাদন করে যে টাকা আয় করেছি, ৫০ শতাংশ জমিতে ধান বা অন্য কোন ফসল আবাদ করে এ টাকা আয় করা সম্ভব না।ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মো. ছাইয়েদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন জানান, তারা ফরিদুলের পলিনেট হাউজ পরিদর্শন করেছেন। তা দেখে ও এর সুফল শুনে তাদের কৃষক সংগঠনের অনেকে আগামীতে এই পদ্ধতিতে শাক সবজি, বিভিন্ন ফসল ও চার উৎপাদন করবেন বলে মনস্থির করেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, পলিনেট হাউজ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করায় কৃষিতে যেমন বৈচিত্র আসবে, তেমনি অনেকেই আয়ের নতুন উৎসের সন্ধান পাবে। পলিথিনের ছাউনি থাকায় এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভিতরে প্রবেশে করতে পারেনা, ফলে অতি বৃষ্টিসহ যেকোন সাধারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকে। অসময়ে সবজি চাষের জন্য পলিনেট হাউজ দেশে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নতুন সংযোজন বলে তিনি জানান। এ হাউজের মাধ্যমে শীতকালীন সবজিগুলো যেমন সহজেই গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যায়, তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যায়। তাছাড়া যেকোন শাক সবজি ও বিভিন্ন ফসলের চারা উৎপাদনে এই পদ্ধতির বিকল্প নেই বলে কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ মনে করেন।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102
error: ভাই, খবর কপি না করে, নিজে লিখতে অভ্যাস করুন।