শেরপুরের নকলা উপজেলার এক অসহায় পরিবারের সন্তান মো. মেহেদী হাসান নামে এক শিক্ষার্থী তার বৃদ্ধ অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য নিজের একটি কিডনী বিক্রি করার আগ্রহ প্রকাশের হৃদয়বিদারক খবর একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচার-প্রকাশের পরে তাৎক্ষণিক সহায়তা নিয়ে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
মেহেদী হাসানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সে উপজেলার হাসনখিলা এলাকার মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে। বেশ কয়েক বছর আগে তার বাবা রফিকুল ইসলাম অন্য একটি বিয়ে করে তাদেরকে বাড়ি থেকে বেড় করে দেওয়া হয়। এর পর থেকে তার বাবা তাদের আর কোন খোঁজ খবর রাখেন না। তারা বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে থাকতে শুরু করে। ছেলে মেয়েদের খাবার ও তাদের লেখাপড়ার খরচসহ পরিবারের ব্যয় বহন করতে মেহেদীর মা বৃদ্ধ বয়সে বাধ্য হয়েই অল্প বেতনের একটি পোশাক তৈরীর কারখানায় চাকরি শুরু করেন। কষ্ট হলেও বেশ চলছিলো তাদের দিন।
এর কয়েক বছর পরেই হঠাৎ মেহেদী হাসানের মা স্ট্রোক করায় তার হাত অচল হয়ে যায়। স্বাভাবিক কারনেই সংসারের দায়িত্ব পড়ে শিক্ষার্থী মেহেদীর মাথায়। তাদের পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। দিশেহারা হয়ে পড়ে কলেজ পড়ুয়া মেহেদী। তার লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যায়। একদিকে আয়ের কোন উৎস নেই, অন্যদিকে মা অসুস্থ! তাই অবশেষে বধ্য হয়েই নিজের কিডনী বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন দিশেহারা অসহায় মেহেদী।
মেহেদী হাসান তার মাকে সুস্থ করে তুলতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মায়ের চিকিৎসার জন্য নিজের কিডনী বিক্রি করা হবে মর্মে পোষ্টর লাগানোর সময় বেসকারি টেলিভিশন একাত্তরের এক রিপোর্টারের ক্যামেরায় এই হৃদয়বিদারক চিত্র ধরা পড়ে। এই বিষয়ে একাত্তুর টেলিভিশনে একটি মানবিক প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। প্রতিবেদনটি শেরপুর জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার ও নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ-এঁর নজরে আসে।
নিজের কর্মস্থল শেরপুর জেলা ও নকলা উপজেলাকে ঘিরে এমন হৃদয়বিদারক খবর টেলিভিশনে দেখে তাৎক্ষণিক নগদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ অসহায় মেহেদী হাসানের ভাড়া বাসায় হাজির হন। এসময় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন, সমাজসেবা অফিসের মাঠকর্মী ছায়েদুর রহমানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
ইউএনও বুলবুল আহমেদ বলেন, মান্যবর জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার-এঁর পরামর্শক্রমে আমি নিজে এসে মেহেদী হাসানের পরিবারের জন্য খাবারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ও অসুস্থ মায়ের জন্য আপাতত এক সপ্তাহের ঔষুধ ক্রয় বাবদ নগদ ১০ হাজার টাকা পৌঁছে দিলাম। তাছাড়া মেহেদীর অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ঔষুধ সমাজ সেবা দপ্তর থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও বুলবুল আহমেদ ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন।
মায়ের চিকিৎসা বাবদ নগদ অর্থ হাতে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মেহেদী হাসান। সে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমাকে সুস্থ করে তুলতে যা করার দরকার হবে আমি তাই-ই করতে প্রস্তুত। তবে একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে মায়ের চিকিৎসা ও পরিবারের খাবারসহ অন্যান্য ব্যয় বহন করা সহজ হতো। সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব হবে বলে মেহেদী মনে করেন। তাই কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি যদি তাকে একটি কর্মের ব্যবস্থা করে দিতেন, তাহলে তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকতেন, এমনটাই জানান শিক্ষিত বেকার মেহেদী। একাত্তর টেলভিশন কর্তৃপক্ষ, প্রতিবেদক রাশেদ আনিসসহ শেরপুর জেলা প্রতিনিধি সাকিল মুরাদ ও প্রতিবেদন তৈরীতে যে বা যারা বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে তার বিষয়টি উর্ধ্বতনদের নজরে এনেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মেহেদী। তাছাড়া খবর প্রকাশের পরে তাৎক্ষণিক সহযোগিতার হাত নিয়ে তারে পাশে দাঁড়ানোর জন্য সে কৃতজ্ঞতাসহ ধন্যবাদ জানায় জেলা-উপজেলা প্রশাসনকে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় এমন মানবিক প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হউক এমনটাই কামনা করেন সবপেশাশ্রেনীর লোকজন।