শেরপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করে বিজয়ী হয়েছেন শরীরে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার স্প্রিন্টার বহনকারী নকলার উম্মে কুলসুম রেনু।
সোমবার (১৭ অক্টোবর) নকলা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহন চলে। প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যদিয়ে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রয়োগ করে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
উম্মে কুলসুম রেনু ২নং সংরক্ষিত মহিলা আসনের (নকলা, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা) সদস্য পদে দোয়াত কলম প্রতিকে ১৫০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ক্লোডিয়া নকরেক হরিণ প্রতিকে পেয়েছেন ১২৮ ভোট, অপর এক প্রার্থী নহেলিকা দিব্রা ফুটবল প্রতিকে পেয়েছেন ১২১ ভোট।
এ বিজয়ের মাধ্যমে তিনি দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনসেবা করার দায়িত্ব পেলেন। এর আগে তিনি নকলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রজাপতি প্রতিক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
নবনির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য উম্মে কুলসুম রেনু নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী উম্মে কুলসুম রেনু জানান, ২০০৪ সালের ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার সময় আইভি রহমানের কাছেই অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, তৎকালীন বিট্রিশ হাই কমিশনার আনোয়ার কবিরের লক্ষ্যকরে গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ২৩ নাম্বার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আমাদের সমাবেশ ডাকা হয়। সমাবেশে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্য শেষ করে জয়বাংলা ও জয় বঙ্গবন্ধু বলার সাথে সাথেই রমনা ভবনের ছাদের ওপর থেকে গ্রেনেড হামলা করা হয়। গ্রেনেডটি নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে মারা হলেও গ্রেনেডটি সরাসরি নেত্রীর শরীরে আঘাত নাকরে আমাদের প্রয়াত আইভি আপার শরীরে গিয়ে পরে। এতে সেখানে অবস্থান করা আইভি আপাসহ আমরা সবাই আহত হই। আমরা মাটিতে পড়ে যাই, তখনও আরো গ্রেনেড ফুটতেছিলো। এদিকে আমাদের শরীর থেকে রক্ত জড়ছে। এই চিত্র আমরা দেখতাছি, কিন্তু কিছু বলতে পারতাছি না। এরপরও একের পর গ্রেনেড পড়ছে। এমন কিছু দৃশ্য দেখা অবস্থায় কখন জানি আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি তা জানি না। এর পরে কি হয়েছে তার কিছুই আমি বলতে পারি না।
তিনি আরো বলেন, লোক মুখে শুনেছি গ্রেনেড হামলারস্থল থেকে প্রথমে আমাকে উদ্ধার করে নাকি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে আমার অবস্থার অবনতি হতে থাকলে বেগম মতিয়া চৌধুরী ও সাবের ভাইসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সহায়তায় আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ধানমন্ডির গ্রীন ল্যাব হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে আমার চিকিৎসা শুরু হয়। ১৪দিন পড়ে জ্ঞান ফিরে আমার। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের বেলুর সিএমসি হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে আসি। তারপর সাভার সিআরপি হাসপাতালে ৮ মাস চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসি। প্রথমে হাটতে পারতাম না। কিছুদিন পর থেকে একটু একটু হাটতে পারি। তবে এখনো পায়ে শতভাগ বল-শক্তি পাই না।
চিকিৎসদের বরাত দিয়ে তিনি জাননা, ভারতে অস্ত্রোপাচার করার পরেও তার শরীরে গ্রেনেডের অন্তত ৭টি স্প্রিন্টার রয়েগেছে। এসকল স্প্রিন্টার শরীরে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে তার। এগুলো নাকি শরীর থেকে আর বের করা যাবে না।
এসকল স্প্রিন্টার শরীরে নিয়েই বর্তমানে নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও ঢাকা দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া একবার উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন শেরপুর জেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনসেবা করার সুযোগ পেলেন। এর জন্য ভোটার ও কর্মী সমর্থকদের পাশাপাশি তাকে জয়ী করতে যে বা যারা বিভিন্ন ভাবে কাজ করেছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি আজীবন মানুষের সেবা করে যেতে চান। তাই সকলের কাছে দোয়া কামান করেছেন নবনির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য উম্মে কুলসুম রেনু।