শেরপুরের নকলা উপজেলার সুতিখালি, বলেশ্বর ও সুবর্ণখালি নদীসহ বিভিন্ন নদ-সদী থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে তা খনন, সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবী জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটি।
রবিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরের দিকে জনউদ্যোগের নেতৃবৃন্দ ৬ দফা দাবী সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার-এঁর নিকট প্রদান করেন।
জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির সদস্য সচিব হাকিম বাবুল জেলা প্রশাসকের নিকট এ স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। এসময় প্রেস ক্লাব সভাপতি মো. শরিফুর রহমান, কমিউনিস্ট পার্টির সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মো. সোলায়মান আহমেদ, যুব ফোরাম আহ্বায়ক বিতার্কিক শুভংকর সাহা, নৃ-জনগোষ্ঠির নেতা সুমন্ত বর্মন, স্বেচ্ছাসেবক হাসিব বিন মিজান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার স্মারকলিপি গ্রহণ করে বিষয় গুলোর খোঁজ খবর নিয়ে জেলার নদ-নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জনউদ্যোগ কমিটির সদস্যদের জানিয়েছেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, নকলা উপজেলার ৬নং পাঠাকাটা ইউনিয়নের সুতিখালি নদী বর্তমানে অবৈধ দখলদারের কবলে চলে গেছে। এক সময় এই সুতিখালি নদী জেলা অন্যতম দেশি মাছের অভয়ারন্য বলে পরিচিতি থাকলেও অবৈধ দখলদাররা নদীতে বাঁধ দিয়ে শতাধিক পুকুর তৈরির মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে সেখানে মাছ চাষ করছে। নাগরিকদের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর সুতিখালি নদী থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছিলো। সে সময় নদীটির বেশকিছু অংশ উদ্ধার করা হলেও অজ্ঞাত কারণে কিছ ুদিন পর সেই উদ্ধার অভিযান স্থবির হয়ে পড়ে। এখনও দখলদাররা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এতে নদীটি নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।
এখনই নদীটি দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করে খননের মাধ্যমে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ সৃষ্টি করা না গেলে এক সময় হয়তো সুতিখালি নদী শেরপুরের মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে। নকলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা সুবর্ণখালি নদীর অবস্থাও ভালো নেই। অবৈধ দখলদাররা নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করে গ্রাস করে নিচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকা। ক্রমে সঙ্কুচিত হয়ে গতি হীন হয়ে পড়ছে নদীটি।
নকলা শহরের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে চলা প্রবাহমান বলেশ্বর নদী দখল ও নাব্যতা সংকটে হারিয়ে গেছে। স্বাভাবিক প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে বাঁধ নির্মাণসহ নানা অত্যাচারে জেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, ভোগাই, চেল্লাখালি, মৃগী, সোমেশ^রি, ঝিনাই, কালাঘুষা, দশানি, মহারশিসহ অন্যান্য নদী এবং পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন ছড়া, ঝোরা, ঝরণা আজ গতিহীন হয়েপ ড়েছে।
তাছাড়া শ্যালোচালিত ড্রেজার মেশিন বসিয়ে জেলার বিভিন্ন নদ-নদী থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এতে ভু-প্রকৃতিক পরিবর্তনের ফলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে।
সরকারিভাবে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা এবং শাস্তির আওতায় আনলেও বালু খেকোদের নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না। জেলার নদ-নদী, প্রাকৃতিক জলাশয় গুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে জীববৈচিত্র বিনষ্টসহ কৃষি নির্ভর শেরপুর জেলার কৃষি অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে।
শেরপুর জেলার ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। এজন্য জনউদ্যোগ কমিটির পক্ষ থেকে স্মারকলিপিতে ৬ দফা দাবী তুলে দরা হয়েছে। এগুলো হলো- জেলার কৃষি অর্থনীতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে নদ-নদী, প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করতে হবে। নদ-নদী, প্রাকৃতিক জলাশয় গুলো খনন করে পানির প্রবাহ ও ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন নদী খনন করে প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ভুমি সংস্কারের নামে ভুমিহীনদের মধ্যে খাস জমি বিতরণের সময় নদী ও জলাভুমির বর্ষাকালীন প্রবাহ পথ নদী ও জলাভুমির অধিকার পথ হিসেবে অক্ষত রাখতে হবে। সকল নদী ও জলাভুমি সিএস ম্যাপ অনুযায়ী খাসজমি হিসেবে অক্ষুণ্ন রাখতেহবে। আরএস বা এসএ ম্যাপে কিংবা বিআরএস ম্যাপে খাসজমি ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে দেখালে তা বাতিল করতে হবে। পরিকল্পিত ভাবে নদী থেকে মৎস্য ও খনিজ সম্মদ আহরণ করতে হবে। কোন ক্রমেই নদীর জীববৈচিত্র্য কিংবা স্বাভাবিক গতিপথ নষ্ট করা যাবেনা। নদীতে অপরিকল্পিত বাঁধ, ড্যাম, ব্যারেজ নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখতে হবে।