শেরপুরের নকলায় আবারো এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিঃস্ব হলো আরো ৪ পরিবার। সব কিছু পুড়ে এখন তাদের রাস্তায় বসার উপক্রম। বুধবার (১২ অক্টোবর) দিবাগত মাঝরাতে উপজেলার পৌরসাভাধীন কলাপাড়া এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে। এতে উপজেলায় আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হওয়ার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হলো আরও চারটি নিম্নমধ্যম আয়ের পরিবার।
ক্ষতিগ্রস্থরা হলেন- আব্দুল আজিজ, আবু সমা, ইয়াছিন আলী ও ইয়াকুব আলী। খবর পেয়ে শেরপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে স্থানীয়দের সাথে নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার প্রধানদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ঘরে রাখা নগদ টাকা, জমির দলিলপত্রসহ অতি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাগজপত্রাধি, স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বই খাতাসহ ঘরের সকল আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়েগেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ৪টি পরিবারের চারটি বসত ঘরসহ পাশের দুটি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে ২৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা সমমূল্যের সম্পদ পুড়ে ছাই হয়েগেছে বলে কান্না জড়িত কণ্ঠে আলাদা ভাবে জানান ক্ষতিগ্রস্থ আব্দুল আজিজ, আবু সমা, ইয়াছিন ও ইয়াকুব আলী। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারনা করছেন স্থানীয় জনগন ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা।
আগুন লাগার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশফিকুর রহমান, ওসি তদন্ত ইস্কান্দার হাবিবসহ থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া বৃহস্পতিবার পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন, প্যানেল মেয়র ইন্তাজ আলীসহ অনেকে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ি পরিদর্শন করেন।
পরে জেলা প্রশাসকের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতি পারের মাঝে ২ বান্ডেল করে ঢেউটিন, সাময়িক ভাবে ঘর মেরামতের জন্য ছয় হাজার করে নগদটাকা ও শুকনো খাবার প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ নিজ হাতে এসব প্রদান করেন। এসময় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সারোয়ার আলম তালুকদার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাবুল আরিফ ও উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক মাহফুজুল ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী-এর পরামর্শক্রমে পৌরসভার পক্ষ থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবারের মাঝে এক বস্তা করে শুকনা খাবার, ৩ হাজার করে নগদ টাকা ও কম্বল প্রদান করেছেন। এসময় স্থানীয় সমাজ সেবক শহিদুল আলম, তরুণ সমাজ সেবক মাহফুজুল ইসলাম, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইন্তাজ আলী, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর সুফিয়া বেগম, পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী মোশাররফ হোসেনসহ পৌরসভায় কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, নকলা প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দ, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় গন্যমান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নকলা উপজেলায় প্রায় প্রায়ই আগুনে পুড়ছে বসতঘরসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হচ্ছে উপজেলার অগণিত পরিবার। তাছাড়া উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকজন না থাকায় পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়েও প্রান হারাতে হচ্ছে শিশুসহ অনেকের। এদিকে নজর নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ কারো। আর কত পরিবার নিঃস্ব হলে ও স্বজন হারালে টনক নড়বে সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের? এমন প্রশ্ন আগুনে পুড়া পরিবারসহ সুশীলজনের।
উন্নয়নশীল থেকে দ্রুত মধ্যম আয়ে পরিনত হওয়া বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশের সাবেক সফল কৃষিমন্ত্রী শেরপুর-২ এর বর্তমান সাংসদ বাংলার অগ্নিকন্যা হিসেবে খ্যাত বেগম মতিয়া চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা নকলা উপজেলাতে মহৎ ও বৃহৎ কোন উন্নয়ন কাজ জমির মালিকানা বিষয়ে একটি মামলার কারনে বাধাগ্রস্থ হবে, তা কারও কাম্যনয়। তাই সচেতন মহলসহ অনেকের ধারনা স্থানীয় এমপি সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর হস্তক্ষ্যাপ ও প্রচেষ্ঠাতেই হতে পারে এর সুষ্ঠু সমাধান। তাতে উপজেলাবাসী পেতে পারে আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন। আগুনের পুড়া থেকে রক্ষা পেতে পারে নকলাবাসীর জান-মাল।
সর্বসাধারনের দাবী উন্নয়নের অংশ হিসেবে ৮০ ভাগ সম্পন্ন হওয়া ভবনের বাকি কাজ সম্পন্ন করাসহ নকলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের জন্য নিয়োগকৃত জনবল যেন নকলাবাসীর জান-মাল রক্ষার কাজে লাগেন। তাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবনটি নষ্ট হওয়ার হাতথেকে রক্ষা পেয়ে জনকল্যাণে আসবে। দ্রুত নকলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভবনের বাকি নির্মান কাজ শেষে আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করা হবে বলে অনেকে আশাব্যক্ত করেন।
তথ্য মতে, ২০০৬ সালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ভবনের জন্য ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কের পাশে নকলা হাসপাতালের অদূরে এক খন্ড জমি নির্ধারণ করা হয়। ওই বছরই প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সীমানা নির্ধারণের সময় রেকর্ড অনুযায়ী জায়গার মালিকানা দাবিদার উপজেলার নারায়ণখোলা এলাকার দুই সহোদর ভাই কেশব প্রসাদ ও দুধনাথ প্রসাদ ফায়ার সার্ভিস দপ্তরকে বাঁধা দেন। পরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দদের সহযোগিতায় ওই জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
নির্মান কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষে হয়ে গেলে, ওই দুই ভাই আপত্তি জানিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন এবং আদালতের নির্দেশে নির্মান কাজ স্থগিত করা হয়। এরপর থেকে আজও ওই কাজটি আটকে আছে। একটি ফায়ার সার্ভিসের অভাবে প্রায়ই যেভাবে জনগণের সম্পদ পুড়ে ছাই হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে উদ্ধেগজনক। তাই আগুনে পুড়া থেকে জনগনের জানমাল রক্ষার্থে দ্রুত সময়ের মধ্যে নকলায় পূর্ণাঙ্গ একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের দাবী সর্বসাধারণের।