অন্তহীন জ্ঞানের আঁধার হল বই, আর বইয়ের নির্ভরশীল আবাসস্থল হলো যেকোন গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি বা পাঠাগার। গ্রন্থাগার হলো কালের খেয়াঘাট; যেখান থেকে মানুষ সময়ের পাতায় অন্তহীন ভ্রমণ করতে পারেন। একটি গ্রন্থাগার মানব জীবনকে যেমন পাল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে একটি সমাজ, একটি দেশ ও জাতিকে; তেমনি পাঠকের আত্মার খোরাক যোগায় এ গ্রন্থাগার। তাই গ্রন্থাগারকে বলা হয় শ্রেষ্ঠ আত্মীয়, যার সাথে সবসময় ভালো সম্পর্ক থাকে। আর জ্ঞানচর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অনন্য।
মানুষ যেহেতু বুদ্ধিবৃত্তিক জীব, আর প্রতিটি মানুষ তার বুদ্ধি ও মননের অনুশীলনের প্রয়োজনে জ্ঞান আহরণ করে থাকেন। বিভিন্ন মহা মানব বা মনীষীদের মতে, জ্ঞান আহরণের দুটো উপায় আছে; একটি দেশভ্রমণ, অন্যটি গ্রন্থপাঠ। দেশভ্রমণ ব্যয় বহুল ও সময় সাপেক্ষ বিধায় সবার পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠেনা। তাই জ্ঞান আহরণের জন্য প্রকৃষ্টতম উপায় হলো গ্রন্থপাঠ। কিন্তু জ্ঞানভান্ডারের বিচিত্র সমারোহ একজীবনে সংগ্রহ করা ও পাঠ করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। তবে এই অসাধ্যকে কিছুটা হলেও সাধন করা সম্ভব হয় গ্রন্থাগারের মাধ্যমে।
এই বিশ্বাস থেকেই দেশের অনেক স্থানে বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি বা পাঠাগার স্থাপন করা হচ্ছে। অনেকে এসকল গ্রন্থাগারে বই প্রদানসহ বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। এমন একজন বইপ্রেমী হলেন- বর্তমান সময়ের আলোর দিশারী হিসেবে খ্যাত কাজী এমদাদুল হক খোকন। বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে দেশব্যাপি স্থাপতি গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরিতে বই উপহার দেওয়া যেন তার নেশাতে পরিণত হয়েছে।
ঘুণেধরা মানব সমাজকে আলোকিত করতে ও স্মার্টফোনের ভয়াল থাবাসহ সামাজিক অবক্ষয় থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে তিনি দেশের বিভিন্ন গ্রন্থাগারে নিজের অর্থায়নে বই উপহার দেওয়ার মতো মহৎ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। প্রচার বিমুখ আলোর দিশারী এই মানুষটি একান্ত ভালো লাগা থেকে এমন মহৎ কাজ শুরু করেন। বিনিময়ে কোন রকম প্রশংসা ও প্রত্যাশা তার নেই। তার দেওয়া বই থেকে কোন পাঠক বা সমাজের মধ্যে সামান্য পরিবর্তন ঘটলেই তিনি খুশি।
কাজী এমদাদুল হক খোকনের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৯ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন গ্রন্থাগারে বই উপহার দেওয়ার মতো মহান কাজটি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে দেশের ২০০টি গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি বা পাঠাগারে বই উপহার দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করেছেন। ৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) পাবনার আটঘরিয়ায় স্থাপিত আলোর পাঠশালা নামক গ্রন্থাগারে বই প্রেরণের মাধ্যমে তার ২০০ নম্বর গ্রন্থাগারে বই উপহার পাঠানো কাজ শেষ হয়। একই দিন অন্য আরো ৪টি গ্রন্থাগারে বই উপহার পাঠিয়েছেন মর্মে নিজের ফেইসবুক টাইম লাইনে ছোট্ট একটি লেখা পোস্ট করেছেন। এর পর থেকে তাকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি অনেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজ নিজ ফেইসবুক টাইম লাইনে পোস্ট করেছেন। বিভিন্ন তথ্য মতে জানা গেছে, তিনি কোন কোন গ্রন্থাগারে এপর্যন্ত ৭ থেকে ১০ দফায় বই উপহার দিয়েছেন।
কাজী এমদাদুল হক খোকন জানান, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণ ও মানুষের মূল্যবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়িত কাজ করে যাচ্ছেন আলোর দিশারী মধ্য বয়সি এ বই প্রেমিক। তিনি শরীয়তপুর জেলার ডামুড্ডা উপজেলার প্রিয়কাঠি গ্রামের কৃতি সন্তান। তার বাবার চাকরিসূত্রে ময়মনসিংহ সদরের কেওয়াট খালী রেলওয়ে কলোনিতে তিনি বড় হয়েছেন। তার বর্তমান বসবাস রাজধানী ঢাকার মিরপুর-২ এর ব্লক-এ, রোড-৩ এর ২ নং বাড়িতে।
তিনি আরো বলেন, “পড়িলে বই, আলোকিত হই; না পড়িলে বই, অন্ধকারের রই” এই শ্লোগানের প্রতি মনেপ্রাণে বিশ্বাস রেখে সমাজকে অন্ধকার থেকে মুক্ত করে তথা আলোকিত সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি গ্রন্থাগারে বই উপহার দেওয়ার মতো সমাজউন্নয়ন মূলক এই কাজটি চালিয়ে যাচ্ছি। এই কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে তিনি জানান।
কাজী এমদাদুল হক খোকনের মতো দেশের সকল ধনাঢ্য ও সুশীলজন যদি দেশ ও জাতির উন্নয়নে গ্রন্থাগারে সার্বিক সহযোগিতা করতেন তাহলে, ঘুণেধরা মানব সমাজকে আলোকিত করতে ও স্মার্টফোনের ভয়াল থাবাসহ সামাজিক অবক্ষয় থেকে যুব সমাজকে রক্ষা আরো সহজ হতো বলে শিক্ষিত সমাজসহ অনেকে মন্তব্য করেন।