বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৪ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
রফিকুল ইসলাম আধার’র ২টি কাব্যগ্রন্থ পাওয়া যচ্ছে একুশে বই মেলায় বন্যার ক্ষতি পোষাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন নকলার কৃষক শেরপুরে ছাত্রশিবিরের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন নকলায় ভিডব্লিউবি উপকারভোগীর মাঝে সঞ্চয়ের টাকা প্রদান নকলায় ৫৩তম শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরণ শেরপুরের ৩টি সংসদীয় আসনের জন্য জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা নকলায় শতভাগ উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্দীপণা পুরষ্কার প্রদান নকলায় গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২, আহত ৪ নকলায় নেতৃবৃন্দের খোঁজখবর নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফাহিম চৌধুরী নকলার চরঅষ্টধর ইউনিয়ন যুব অধিকার পরিষদ’র সভাপতি রনি, সম্পাদক সুজন

আত্মহত্যা প্রবণতারোধে ‘সুইসাইড প্রোটেক্টিং স্কোয়াড বাংলাদেশ’: দরকার পৃষ্ঠপোষকতা

মো. মোশারফ হোসাইন:
  • প্রকাশের সময় | শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২
  • ৩০৯ বার পঠিত

প্রতিটি ধর্মেই আত্মহত্যা মহাপাপ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এটা সকলেরই জানা। জানা থাকার পরেও দেশব্যাপি অস্বাভাকি হারে আত্মহত্যা বেড়েই চলছে! যা দেশ ও জাতির জন্য অশুভসংকেত বলে অনেকে মনে করছেন।

গত ১৬ আগস্ট শেরপুর সদর উপজেলার মীম আক্তার (১৯), ঝিনাইগাতীর উপজেলার মায়া আক্তার মৌ (১৪) ও নকলা উপজেলার অজুফা বেগম (৩০) নিজের ঘরে গলায় উড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। যা জেলাবাসীতো বটেই দেশবাসীকে হতবাক করেছে।

এযেন করোনা অতিমারির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আত্মহত্যা। সরকারি ও বেসরকারিভাবে আত্মহত্যার প্রবণতারোধে জোরালো কোনো পদক্ষেপ না থাকায় তা দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে আত্মহত্যার প্রবণতারোধে নিরলস কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সগঠন ‘সুইসাইড প্রোটেক্টিং স্কোয়াড বাংলাদেশ’। এই সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।

তবে আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করা চ্যালেঞ্জ জেনেও আত্মহত্যা প্রবণতারোধে কাজ করে যাচ্ছেন ‘সুইসাইড প্রোটেক্টিং স্কোয়াড বাংলাদেশ’ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা এলাকার বদরুল মোর্শেদ আসাদ।

আসাদ মালিঝিকান্দা গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে। তিনি বর্তমানে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ কোর্সের শিক্ষার্থী। আসাদ ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করার পরেই আত্মহত্যা প্রবণতারোধের মতো চ্যালেঞ্জিং কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন।

বিগত ২০১৮ সালের শুরুতে স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠালগ্নে যারা ছিল তারা কেউ আর এখন এই সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত নেই। নিজেদের ক্যারিয়ার ও সংগঠনের কাজকে চ্যালেঞ্জিং মনে করে অনেকে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। তবে আশাহত হননি উদ্দমী এই তরুণ। সবাই হাল ছাড়লেও, হাল ছাড়েননি আসাদ। তিনি তার মতো করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ‘পারষ্পরিক সহমর্মিতা রুখতে পারে আত্মহত্যা’-এই স্লোগানের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে তিনি সামনে এগিয়ে চলছেন।

বদরুল মোর্শেদ আসাদ জানান, যেকোন মাধ্যমে কারও হতাশাজনক স্ট্যাটাস দেখলে ও মেনশন পেলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা ওই হতাশাগ্রস্থ ব্যাক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রয়োজন হলে তার সঙ্গে দেখা করে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে তাকে সাহস যোগান তারা। আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির কথা মনোযোগ সহকারে শুনে এর সুষ্ঠু সমাধান বের করার চেষ্টা করেন এবং অধিকাংশ সমস্যা সমাধান করেন। তাৎক্ষণিক সরাসরি যোগাযোগ করায় সমস্যা হলে, তাকে ফোন কল বা ও ভিডিও কলের মাধ্যমে কাউন্সিলিং করা হয়। তার কথা শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন এই সংগঠনের সদস্যবৃন্দ।

এই সংগঠনের সদস্যরা ফেসবুকে নিজ নিজ টাইম লাইনে, পাবলিক গ্রুপে ও পেজের মাধ্যমে নিয়মিত সচেতনতামূলক পোস্ট শেয়ার করেন। এছাড়া ক্যারিয়ার গঠন, প্যারেন্টিং, পারিবারিক শিক্ষা ও সন্তান পালনে করণীয় শীর্ষক ওয়ার্কশপের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে এই সংগঠন।

তিনি বলেন, সংগঠনটি প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন ফয়সাল আহমেদ, পরিচালক (সার্বিক) দায়িত্বে আছেন সিদ্দিকুন সিমলা। এই সংগঠনটির কার্যক্রম ঢাকা, শেরপুর, বাগেরহাট, ময়মনসিংহ, সাভার, নোয়াখালী, নরসিংদী, কুড়িগ্রাম, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জেলাতে চলমান আছে। সংগঠনটির কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, সারা দেশে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী আছেন, যারা অফলাইন ও অনলাইনের মাধ্যমে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন।

বিভিন্ন তথ্য মতে জানা গেছে, সুইসাইড প্রোটেক্টিং স্কোয়াড বাংলাদেশ অনলাইনের মাধ্যমে অন্তত ৫,০০০ হতাশাগ্রস্থ ছেলে-মেয়েদের সেবা প্রদান করা হয়েছে। আত্মহত্যার চিন্তা করেছে এমন ২৭০ জনকে সুস্থ্য জীবনে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে এই সংগঠনের স্বেচ্ছাসবকগন। তার জানান, দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা মূলক সভা, সেমিনার ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার পরিকল্পনা হাতে নিয়ে, তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

দেশব্যাপি সচেতনতা তৈরি করতে দরকার সভা-সেমিনার জরুরি বলে তারা মনে করেন। ভবিষ্যতে একটা ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার করার ইচ্ছা আছে বলে তাদের অনেকে জানান। এমন একটা প্ল্যাটফর্ম করা দরকার, যেখানে মানুষ যোগাযোগ করে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও প্যারেন্টিং, ক্যারিয়ার ও জীবন ভিত্তিক পরামর্শ পাবেন। এছাড়া হতাশাগ্রস্ত ও আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষের কল্যাণে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে বলে এই সংগঠনের অনেকে জানান।

বিশেষ করে, সারাদেশের স্কুল ও কলেজ গুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা, আত্মহত্যা প্রতিরোধ, সাইবার বুলিং, স্কুল ভায়োলেন্স ও বুলিংসহ যৌতুক প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরির পরিকল্পনা তাদের রয়েছে বলে জানান, শেরপুরের ছেলে বদরুল মোর্শেদ আসাদ।

আসাদ আরো জানান, আগে আমাদের এই কাজ নিয়ে অনেকেই হাসা-ঠাঠ্রা করতেন। অনেকেই আমাদের সুইসাইড এনালিস্ট বলে তিরস্কার করতেন। তবে এখন অনেকটাই কমেছে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে সকলকে আরো সচেতন হতে ও হতাশাগ্রস্থ অন্যদেরকে সচেতনতার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে অনুরোধ জানান তিনি। দেশের প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে আলাদা সেল গঠন করার দাবী জানান এই স্বেচছাসেবক। যেখানে বিনামূল্যে ঔষুধ সরবারহ ছাড়াও জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করা হবে। দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন করে শিক্ষকদের আত্মহত্যা প্রবণতারোধে কাজ করতে প্রশিক্ষক দেওয়া হবে মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করায় সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি কৃতজ্ঞতাসহ ধন্যবাদ জানান ‘সুইসাইড প্রোটেক্টিং স্কোয়াড বাংলাদেশ’ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা এলাকার বদরুল মোর্শেদ আসাদসহ সংগঠনটির সাথে সংশ্লিষ্ঠ অনেকেই।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102
error: ভাই, খবর কপি না করে, নিজে লিখতে অভ্যাস করুন।