শেরপুরের নকলায় গাঙচিল সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের প্রচেষ্ঠায় ও নকলা প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দের তত্বাবধানে কাগজের বই পড়ায় আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
১ জুলাই শুক্রবার রাতে গাঙচিল সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ শেরপুর জেলা শাখার উদ্যোগে নকলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে স্থানীয় সাংবাদিক ও সুধী সমাজের সাথে মতবিনিময়ের ফলশ্রুতিতে অনলাইনে বই পড়ুয়াদের মাঝে কাগজের বই পড়ায় আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিন “কাগজের বই পড়ার গুরুত্ব ও বই পড়ায় আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে করনীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভা, বই বিতরণ ও কবিতা পাঠের আসর অনুষ্ঠিত হয়। এতে করে পাঠ্য বইয়ের বাহিরে বেড়েছে কাগজের বই পড়ার আগ্রহ। কমেছে অনলাইনে বই পড়ার পাঠক।
মতবিমিয় সভায় বক্তারা জানান, বই মানুষের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে জ্ঞানের পরিধি যেমন বাড়ায়, তেমনি তৃষ্ণা নিবারণ ও মনের বিমর্ষতা দূর করে নির্ভেজাল আনন্দ দেয়। বইয়ের সঙ্গে কেবল তথ্য বা জ্ঞানের সম্পর্ক নয়, একটি ভালো বই পাঠকের জানার পরিধি বাড়ানোর পাশপাশি দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত ও প্রসারিত করে। বই হচ্ছে সভ্যতার ধারক ও বাহক। এর সংস্পর্শে না এলে অতীত ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সভ্যতা সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান লাভ করা অসম্ভব। শুধু অনলাই ভিত্তিক বই ও পাঠ্য বই পড়ে এসব অর্জন সম্ভব নয়। তাই পাঠ্য বইয়ের বাহিরে কাগজের অন্যান্য বই পড়া জরুরি বলে তারা মত দেন। এই যৌক্তিক মতামত গুলো সর্বজন গৃহীত হওয়ায় প্রথমে নকলা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকগন ও পর্যায়ক্রমে সব পেশাশ্রেণীর পাঠকরা কাগজের বই পড়ায় আগ্রহী হন। নকলায় কাগজের বই পড়া পাঠকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার সময় নকলা প্রেস ক্লাবে দেখা যায়, কয়েকজন শিক্ষিত তরুণ পাঠক পাশাপাশি বসে বই পড়ছেন এবং কিছুক্ষণ পর পরই তাদের পঠিত বইয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, নকলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক কবি কাকন রেজার কাব্য গ্রন্থ ‘স্থির করে দাও কম্পমান জল’ পড়ছেন; তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান সৌরভ পড়ছেন কবি রাবিউল ইসলামের ‘স্বচ্ছ ভালোবাসা’ এবং অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল আমিন পড়ছেন সাংবাদিক ও কবি রফিক মজিদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ভ্রমণ কাহিনী গ্রন্থ “মেঘালয়ে ফিরে দেখা-৭১” শিরোনামের বই।
আসাদুজ্জামান সৌরভ জানান, তারা প্রতিদিন এশা নামাজের পরে প্রেস ক্লাবে এসে বিভিন্ন বই পড়েন। এতে তাদের জ্ঞানের পরিধি দিন দিন বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, নকলা প্রেস ক্লাবে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু বুক কর্ণারে সরবরাহকৃত বইগুলো পড়লে পাঠকের প্রানের তৃষ্ণা নিবারণসহ মনের বিমর্ষতা দূর হবেই হবে, পাশাপাশি এই বই যেকাউকে নির্ভেজাল আনন্দ দিতে সক্ষম বলে তিনি মনে করেন।
অপর এক পাঠক আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, নকলা প্রেস ক্লাবে গাঙচিল সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ শেরপুর জেলা শাখার উপহার হিসেবে দেওয়া বই গুলো অত্যান্ত জ্ঞানগর্বের। এই বই গুলো পড়লে যেকেউ বাঙলার অতীত ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সভ্যতা সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান লাভ করতে পারবেন।
নকলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন সরকার বাবু বলেন, নকলার তরুণ সমাজের পরিচিতজনকে শুধু পাট্য বই ও অনলাইন ভিত্তিক বই পড়ার অভ্যাস থেকে দূরে এনে কাগজের অন্যান্য বই পড়ায় আগ্রহী করতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এমনকি সফলার সুবাতাস দেখছি। তিনি আরও বলেন, প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার রাতে পাঠকদের পড়া বই গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। কোন কোন বই থেকে আত্মউন্নয়ন মূলক কি ধরনের জ্ঞান অর্জন করলেন, তা জানার চেষ্টা করা হয়। এতেকরে প্রত্যেকের পঠিত বই থেকে অর্জিত জ্ঞানসমূহ সবার জানা হয়ে যায়।
প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, পাঠ্য বইয়ের বাহিরে কাগজের অন্যান্য বই নিয়মিত পড়ার চলমান এই চর্চা অব্যাহত রাখতে পারলে, এমন এক দিন আসবে যেদিন ক্লাবে বসে বই পড়ার জন্য পাঠকদের জায়গা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হতে পারে। তবে এখন ক্লাবে বসে বই পড়ার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। তাতে পাঠকদের বই পড়তে কোন প্রকার সমস্যা হচ্ছে না; বরং পাঠকরা স্বাচ্ছন্দে বই পড়ার মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রেস ক্লাবে স্থাপিত “বঙ্গবন্ধু বুক কর্ণার” এ দেশি-বিদেশী সনামধন্য কবি, সাহিত্যিক তথা লেখকের কয়েকশ’বই রয়েছে বলে তিনি জানান। প্রেস ক্লাবের এই বুক কর্ণারকে বইয়ে সমৃদ্ধ করতে যে বা যারা সার্বিক সহায়তা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
নকলা প্রেস ক্লাবে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু বুক কর্ণারের বই পড়ে প্রতিটি পাঠক যেন আলোকিত মানুষ হওয়া পথে হাঁটছেন। তাছাড়া সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ চত্বরে নকলা গ্রন্থাগার স্থাপন হওয়ায় সব বয়সের ও পেশাশ্রেণীর পাঠকদের জন্য জ্ঞানার্জনের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সুশীলজন।