প্রায় ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও প্রায় ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় প্রতীক্ষিত মহান স্বাধীনতা। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
এর পর থেকে বাঙালি জাতি ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস ও জাতীয় দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছেন।
তাছাড়া ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস গণহত্যার ঘটনার স্মরণে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ মহান জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বাঙালি জাতি।
বাঙালি জাতির অনেকে এ মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বিজয়, গণহত্যাসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা ও নিজ নিজ এলাকার বিভিন্ন ইতিহাস ঐতিহ্য নিজ নিজ পেশা ও কর্মের মাধ্যমে তুলে ধরতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এমন একজন স্বাধীনতাকামী দেশপ্রেমীক হলেন শেরপুরের কৃতি সন্তান ভাস্কর হারুন-অর-রশীদ খান। হারুন-অর-রশীদ খ্যাতিমান ভাস্কর হিসেবে সকলের কাছে অধিক সমাদৃত হলেও, তাঁর প্রধান পেশা শিক্ষকতা। আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তাঁর কৃতকর্মের জুড়ি নেই।
তবে ভাস্কর হারুন-অর-রশীদ খান শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজ জেলা শেরপুরসহ পাশ্ববর্তী জেলা-উপজেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ভাস্করের মাধ্যমে তুলে ধরতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
এর অংশ হিসেবে- ২০১৯ সালে শেরপুর জেলা প্রশাসক-এঁর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর জন্ম দিবস উপলক্ষে ভাস্কর ও ম্যুরাল নির্মান।
শেরপুর পৌরসভার গৌরবের ১৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে ২০১৮ সালে শেরপুর শহরসহ পৌরপার্ক ও এর আশপাশে হাতি, ঘোড়া, দোয়েলসহ বিভিন্ন জীবজন্তু ও প্রাণীর ভাস্কর নির্মান।
মহান মুক্তিযুদ্ধ ’৭১’ স্মরণে নির্মিত ’যুদ্ধ জয়’ নামের ভাস্কর। শেরপুর পৌরসভার প্রবেশপথে (ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কে) শেরপুরকে হাতি প্রবন এলাকা হিসেবে বুঝাতে পৌরমেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন-এঁর উদ্যোগে হস্তিতোরণ নির্মান।
শেরপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার-এঁর উদ্যাকে ডিসি উদ্যানে নির্ঝরের আনন্দধারা ঝর্না নির্মান। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান-এর পৃষ্ঠপোষকতায় জেলা পরিষদের সামনে নির্মিত ‘ফিস ফাউন্টেন’ নির্মান।
শেরপুর জেলা শহরের প্রবেশমুখে (থানা মোড়ে) শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন-এঁর উদ্যোগে স্থাপিত ঘোড়ার পিঠে বিজয়ী বেশে বীরের প্রতিকী ভাস্কর (সড়িয়ে নেওয়া হয়েছে)।
শেরপুর জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে শেরপুর শহরের প্রবেশমুখে রঘুনাথ বাজার এলাকায় জেলা পরিষদ ডাকবাংলো চত্বরে ‘শেরপুর ৭১’ নামের ভাস্কর্য নির্মান। এছাড়া ব্যক্তি বা দপ্তর প্রধানগনের উদ্যোগে বিভিন্ন অফিস ও ভবনের সামনে ‘সেন্ট পিটার’সহ বিভিন্ন খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গের ছবি ও ভাস্কর।
তাছাড়া শেরপুরের পাশ্ববর্তী জেলা জামালপুরের বকশিঞ্জ উপজেলার বকশিঞ্জ পৌরমেয়ের উদ্যোগে বকশিঞ্জ উপজেলা চৌরাস্তায় (পূর্ব নাম বটতলা) ২০২০ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বটতলার নামকরণ ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে ’বট বৃক্ষ’ ভাস্কর স্থাপন। বকশিঞ্জ উপজেলার সীমন্তবর্তী লাউচাপড়া পিকনিক স্পটে ‘অরণ্য জননী (আচিক মান্দি)’ এর ভাস্কর নির্মান করে সকলের নজর কেড়েছেন। মন জয় করেছেন স্বাধীনতা বা মুক্তিকামী এবং দেশ ও জাতির ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে জড়িত সকলের।
বিশেষ করে শেরপুরের ইতিহাস ঐতিহ্য ভাস্করের মাধ্যমে তুলে ধরতে হারুন-অর-রশীদ’র অবদান অবর্ননীয় তথা অতুলনীয়। তাঁর নির্মিত ভাস্কর মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শেরপুর অঞ্চলের নাম অনন্য স্থান দখল করে আছে। শেরপুর অঞ্চলের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের আলোকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বজনীন বিষয়টি তুলে ধরতেই তিনি বিনাসম্মানীতে ভাস্কর্য নির্মাণ করে যাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর তৈরী ভাস্কর সর্ব মহলে প্রর্শসনীয়। শুধু নির্মাণ উপকরণ ক্রয়ে যা ব্যয় হয় তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রহন করে থাকেন।
ভাস্কর হারুন-অর-রশীদ এঁর তৈরী প্রায় প্রতিটি ভাস্কর্য আমাদের চেতনার বহ্নিশিখা। এসব ভাস্কর্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শাণিত করবে, এমটাই মনে করেন সুশীলজন। তরুণ প্রজন্মের কাছে ভাস্কর্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বিজয়ের স্মারক হিসেবে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরতে কাজ করছেন ভাস্কর হারুন-অর-রশীদ। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলার সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মূর্ত প্রতীক হয়ে আছে তাঁর নির্মিত সকল ভাস্কর। শেরপুরের অহংকার সর্বজন প্রশংসিত ভাস্কর হারুন-অর-রশীদ সকলের মাঝে জন্ম জন্মান্তরে বেঁচে থাকুক এমটাই কামনা সব পেশাশ্রেণী জনগনের।