২৫ মার্চ, ভয়াল গণহত্যা দিবস। বাঙালির ইতিহাসের কালরাত, মানব সভ্যতার ইতিহাসের একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। গণহত্যার এই দিবসের ৫১ বছর পূর্তি উপলক্ষে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ৫১’র আদলে মোমবাতি প্রজ্জলন করে শহীদদের স্মরণ করা হয়েছে। শুক্রবার (২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস) যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যতিক্রমী এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেলেনা পারভীন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক, যুগ্ম সম্পাদক হাজী মোশাররফ হোসেন, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সরকার গোলাম ফারুক, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আলমগীর কবীর, উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মতিউর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়াসিফ রহমান, নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বসির আহমেদ বাদল, উপজেলা প্রকৌশলী রাকিব হাসানসহ উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযাগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সুশীলজন উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন তথ্য মতে, এই দিন রাতে পাকিস্তানের বর্বর হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস গণহত্যার ঘটনার স্মরণে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ মহান জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে দিবসটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা টালবাহানা শুরু করে। বৈঠকের মাধ্যমে কালক্ষেপণ করে নিরস্ত্র বাঙালি নিধনের গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এই পরিস্থতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেন। ১৫ মার্চ থেকে ৩৫ দফা নির্দেশনা পালনের আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ সারা বাংলায় অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়। পূর্ব বাংলায় বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়লে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে বারবার সমঝোতার প্রস্তাব দিতে থাকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এ দেশের স্বাধীনতার পক্ষে অটল থাকলে ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ এর নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে চালায় বিশ্ব ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা। ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ ছিল বাঙালির একটি প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার এক নারকীয় পরিকল্পনা।
২৫ মার্চ ছিল অসহযোগ আন্দোলনের ২৪তম দিন। সেদিন সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া খান গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। মধ্য রাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা সাঁজোয়া ট্যাংক নিয়ে ‘আরেশন সার্চ লাইট’ এর নামে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপরে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা এবং রাজারবাগে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষক, বাঙালি পুলিশ ও সামরিক সদস্যদের হত্যা করতে থাকে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। প্রায় ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও প্রায় ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় প্রতীক্ষিত মহান স্বাধীনতা। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।