শেরপুরের নকলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ৩০০ গজের মধ্যে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৩ পরিবার নিঃস্ব হওয়ার মাত্র ৩ দিনের ব্যবধানে আবার অগ্নিকান্ডে নিঃস্ব হলো আরো এক দরিদ্র পরিবার।
তথ্য মতে, গত শুক্রবার (১৮ মার্চ) পবিত্র শব-ই-বরাতের দিন উপজেলার পৌরসভার কুর্শাবাগৈড় এলাকায় আগুন লেগে ৩টি পরিবারের বসতঘরসহ সব পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার মাত্র ৩ দিনের ব্যবধানে ২১ মার্চ সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উরফা ইউনিয়নের বারমাইসা উত্তরপাড়া বিরনের ঘাট এলাকার আতস আলীর ছেলে সুজন মিয়ার ঘরে আগুন লেগে নগদ ৪০ হাজার টাকাসহ বসত ঘরে থাকা সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফলে নকলায় আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হওয়ার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হলো খেটে খাওয়া আরও একটি অসহায় দরিদ্র পরিবার।
ক্ষতিগ্রস্থ সুজন মিয়া রাজধানী ঢাকায় সুবিধা জনক বিভিন্ন কাজে শ্রম বিক্রি করে দিনাতিপাত করেন। সুজন মিয়ার ঘরে আগুন লাগার খবর পেয়ে স্থানীয় উরফা ইউনিয়ন পরষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নূরে আলম তালুকদার ভুট্টো তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং তাকে ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দসহ নিজস্ব তহবিল থেকে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। এসময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীসহ স্থানীয় গন্যমান্য ও বিভিন্ন পেশাশ্রেণীর জনগন উপস্থিত ছিলেন।
নকলা উপজেলায় প্রায় প্রায়ই আগুনে পুড়ছে বসতঘরসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হচ্ছে উপজেলার অগণিত পরিবার। তাছাড়া উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকজন না থাকায় পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়েও প্রান হারাতে হচ্ছে শিশুসহ অনেকের। এদিকে নজর নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ কারো। আর কত পরিবার নিঃস্ব হলে ও স্বজন হারালে টনক নড়বে সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের? এমন প্রশ্ন আগুনে পুড়া পরিবারসহ সুশীলজনের।
উন্নয়নশীল থেকে দ্রুত মধ্যম আয়ে পরিনত হওয়া বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশের সাবেক সফল কৃষিমন্ত্রী শেরপুর-২ এর বর্তমান সাংসদ বাংলার অগ্নিকন্যা হিসেবে খ্যাত বেগম মতিয়া চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা নকলা উপজেলাতে মহৎ ও বৃহৎ কোন উন্নয়ন কাজ জমির মালিকানা বিষয়ে একটি মামলার কারনে বাধাগ্রস্থ হবে, তা কারও কাম্যনয়। তাই সচেতন মহলসহ অনেকের ধারনা স্থানীয় এমপি সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর হস্তক্ষ্যাপ ও প্রচেষ্ঠাতেই হতে পারে এর সুষ্ঠু সমাধান। তাতে উপজেলাবাসী পেতে পারে আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন। আগুনের পুড়া থেকে রক্ষা পেতে পারে নকলাবাসীর জান-মাল।
সর্বসাধারনের দাবী উন্নয়নের অংশ হিসেবে ৮০ ভাগ সম্পন্ন হওয়া ভবনের বাকি কাজ সম্পন্ন করাসহ নকলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের জন্য নিয়োগকৃত জনবল যেন নকলাবাসীর জান-মাল রক্ষার কাজে লাগেন। তাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবনটি নষ্ট হওয়ার হাতথেকে রক্ষা পেয়ে জনকল্যানে আসবে। দ্রুত নকলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভবনের বাকি নির্মান কাজ শেষে আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করা হবে বলে অনেকে আশাব্যক্ত করেন।
তথ্য মতে, ২০০৬ সালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ভবনের জন্য ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কের পাশে নকলা হাসপাতালের অদূরে এক খন্ড জমি নির্ধারণ করা হয়। ওই বছরই প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সীমানা নির্ধারণের সময় রেকর্ড অনুযায়ী জায়গার মালিকানা দাবিদার উপজেলার নারায়ণখোলা এলাকার দুই সহোদর ভাই কেশব প্রসাদ ও দুধনাথ প্রসাদ ফায়ার সার্ভিস দপ্তরকে বাঁধা দেন। পরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দদের সহযোগিতায় ওই জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
নির্মান কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষে হয়ে গেলে, ওই দুই ভাই আপত্তি জানিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন এবং আদালতের নির্দেশে নির্মান কাজ স্থগিত করা হয়। এরপর থেকে আজও ওই কাজটি আটকে আছে। একটি ফায়ার সার্ভিসের অভাবে প্রায়ই যেভাবে জনগণের সম্পদ পুড়ে ছাই হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে উদ্ধেগজনক।