ময়মনসিংহ শহরের ঐতিহ্যবাহী শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের ম্যানেজিং কমিটির জন্য ৪ জন অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ৫ জন অভিভাবক মনোনয়ন জমা দেওয়ায় প্রতিদ্বন্ধিতা মূলক নির্বাচনের সুর বেজে ওঠে। ভোট প্রার্থনায় মেতে ওঠেন প্রতিযোগী প্রার্থীরা। সবাই এসএমএস (খুদে বার্তা)-এর মাধ্যমে সকল অভিভাবকদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন।
আগামী কাল ২১ মার্চ (সোমবার) ভোট গ্রহনের কথা ছিলো। কিন্তু সিনিয়রদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে গিয়ে শেরপুরের নকলা উপজেলার রফিকুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক তাঁর প্রার্থীতা প্রত্যাহার করায় ৪ জন অভিভাবক বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এখন আর নির্বাচন হচ্ছে না, তাতে কষ্ট লাগব হলো শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের সকল অভিভাবক ভোটারদের।
বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিতরা হলেন শেরপুরের নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, অন্যান্য জেলা-উপজেলার সৈয়দ সাইদুজ্জামান, সোহানুর রহমান ও কামরুজ্জামান।
শেরপুরের নকলা উপজেলার রফিকুল ইসলাম জানান, আমরা ৫ প্রতিযোগিই এসএমএস (খুদে বার্তা) সহ বিভিন্ন মাধ্যমে সকল অভিভাবকদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেছিলাম। আমি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করায় এখন আর নির্বাচন হচ্ছে না। এই বার্তাটিও আমরা সকল অভিভাবকদের কাছে পৌঁছাতে কাজ করছি। অভিভাবকরা যেন তাদের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট না করেন এমনকি শারীরিক ও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হন; এর জন্য আমরা বার্তা পৌঁছাতে কাজ করছি।
শেরপুরের নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, রফিকুল ইসলাম প্রার্থীতা প্রত্যাহার করায় আমরা ৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্ধীতায় অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি।
তথ্য মতে, ১৯৮৯ সালে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম এর কয়েকজন প্রিয় ছাত্র, সহকর্মী এবং গুণগ্রাহী তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনকে ধরে রাখার প্রয়াসে ময়মনসিংহ শহরে প্রতিষ্ঠা করেন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদ। ১৯৯৯ সালের ১ জুলাই শহরের প্রাণ কেন্দ্রে শ্যামাচরণ রায় রোডে কাশি কিশোর কারিগরি বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত একখণ্ড বাড়ীতে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে “শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ”।
১৯৮৯ সালে “শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদ” প্রতিষ্ঠার পরপরই এই মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার উদ্দেশে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উঠে আসে সংগঠনের সভা গুলোতে। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণে অনেক সময় পেরিয়ে যায়। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহ শহরে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ছাত্রদের অধ্যয়নের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান আনন্দ মোহন কলেজ থেকে সরকারি নির্দেশে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি উঠিয়ে দেওয়া হলে অভিভাবকগণ হয়ে পড়েন উদ্বিগ্ন। শহরের অন্যান্য বেসরকারি কলেজ গুণগত মান সম্পন্ন না হওয়ায় কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানকে সরকার সরকারীকরণ না করায় বিষয়টি ময়মনসিংহবাসীর দাবীতে পরিণত হয়।
১৯৯৮ সালে ২৮ আগস্ট শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদের সভায় একটি মান সম্পন্ন এবং শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আলোচ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। বেসরকারি ল্যাবরেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সে সভায় প্রধান আইনজীবী এবং স্মৃতি পরিষদের আহবায়ক এম. জুবেদ আলী সাহেবের সভাপতিত্বে ময়মনসিংহ শহরে একই নামে একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থাকায় বেসরকারি ল্যাবরেটরী উচ্চ বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করে “সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্কুল এন্ড কলেজ” করার প্রস্তাব সর্ব সম্মতিক্রমে গৃহীত হয় এবং এক পত্রে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে বিষয়টি সহানুভূতির সাথে বিবেচনা এবং ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদের পক্ষে অনুরোধ জানানো হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে স্কুলটির সিংহভাগ অভিভাবক সমর্থন জ্ঞাপন করেন।
১৯৯৯ সালের ৬ মে জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কার্যালয়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পরিষদের এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সভায় উপস্থিত হন আনন্দ মোহন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর শামসুল ইসলাম, পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর আবুল কালাম, নেত্রকোণা সরকারী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর মজিবর রহমান, আনন্দ মোহন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মুজিবুর রহমান। সভায় প্রখ্যাত শিক্ষাবিদগণ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দ্যোগকে এবং কলেজটি প্রতিষ্ঠাকল্পে প্রদানের অঙ্গীকার করলে কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে গতিবৃদ্ধি পায়। সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে ২০ সদস্য বিশিষ্ট কলেজ সাংগঠনিক কমিটি তথা প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া তীব্র প্রতিযোগিতামূলক। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বোর্ড কর্তৃক প্রদানকৃত তালিকা থেকে ভর্তি করা হয়। উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে বাংলা মাধ্যমে এখানে পাঠদান করা হয়ে থাকে। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে থাকে। এখানে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা এই তিন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের সুযোগ রয়েছে।