শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় প্রায় প্রতি মাসে আগুনে পুড়ছে বসতঘরসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হচ্ছে উপজেলার অগণিত পরিবার। আর কত পরিবার নিঃস্ব হলে টনক নড়বে সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের? এমন প্রশ্ন আগুনে পুড়া পরিবারসহ সুশীলজনের। উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকজন না থাকায় পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়েও প্রান হারাতে হচ্ছে শিশুসহ অনেকের। এদিকে নজর নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ কারো।
তথ্য মতে, ২০০৬ সালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ভবনের জন্য ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কের পাশে নকলা হাসপাতালের অদূরে এক খন্ড জমি নির্ধারণ করা হয়। ওই বছরই প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সীমানা নির্ধারণের সময় রেকর্ড অনুযায়ী জায়গার মালিকানা দাবিদার উপজেলার নারায়ণখোলা এলাকার দুই সহোদর ভাই কেশব প্রসাদ ও দুধনাথ প্রসাদ ফায়ার সার্ভিস দপ্তরকে বাঁধা দেন। পরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দদের সহযোগিতায় ওই জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
নির্মান কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষে হয়ে গেলে, ওই দুই ভাই আপত্তি জানিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন এবং আদালতের নির্দেশে নির্মান কাজ স্থগিত করা হয়। এরপর থেকে আজও ওই কাজটি আটকে আছে। একটি ফায়ার সার্ভিসের অভাবে প্রায়ই যেভাবে জনগণের সম্পদ পুড়েছাই হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে উদ্ধেগজনক।
৯টি ইউনিয়ন ও দ্বিতীয় শ্রেণির ১টি পৌরসভার সমন্বয়ে গঠিত নকলা উপজেলায় প্রায় ৩ লাখ জনগনের জান-মাল রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনটি চালু করার জন্য দাবি জানিয়ে আসেছন উপজেলাবাসী। এবিষয়ে অজ্ঞাত কারনে সংশ্লিষ্ট ও দায়িত্বশীল সবাই কেনজানি নিরব ভুমিকায় আছেন!
জানা গেছে, জনস্বার্থে এ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের জন্য এরইমধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জনবল, সরবরাহ করা হয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। তবে ভবনটির কাজ শতভাগ সম্পন্ন না হওয়ায় নিয়োগকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শেরপুর জেলা শহরে অবস্থান করেন। নকলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে খবর দিলে তারা গঠনা স্থলে আসতে আসতে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফলে নকলায় আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হওয়ার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। নিজের উপজেলার জন্য সরকার থেক প্রাপ্ত বরাদ্দকৃত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নকলাবাসী।
শুক্রবার (১৮ মার্চ) পবিত্র শব-ই-বরাতের দিন উপজেলার কুর্শাবাগৈড় এলাকায় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগে চারটি পরিবারের বসতঘরসহ সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হওয়ার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হলো খেটে খাওয়া আরও চারটি পরিবার।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদ্যস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগুন লাগার পরে মোবাইল ফোনে অন্তত শতাধিকবার চেষ্টা করলেও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকজন রিসিভ না করায়, তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
শুক্রবার যাদের বসত ঘরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে তারা হলেন- কুর্শাবাগৈড় এলাকার মৃত হামেদ আলীর তিন ছেলে সুরুজ্জামাল, মিনাল ও আবুল হোসেন। তাদের বসত ঘরসহ চারটি ঘরের সব মালমাল পুড়ে গেছে।
এ অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ সুরুজ্জামাল বলেন, নকলা বাজারের ডাকের জন্য আমার ঘরে রাখা নগদ পাঁচ লাখ টাকাসহ স্বর্ণালঙ্কার ও ঘরের সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। এতে তার অন্তত ১৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ মিনাল জানান, তার মেয়ের জামাতা প্রবাস থেকে ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলো। ওই টাকা ব্যংক থেকে তুলে গতকাল তার বসত ঘরে রেখেছিলেন তিনি। তাছাড়া গরু বিক্রির ৫০ হাজার টাকাসহ ঘরে থাকা সমস্ত কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতেকরে অন্তত দশ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।
আবুল হোসেন জানান, তার ঘরের সব কিছু পুড়ে ছাই হয়েগেছে। এখন খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তাদের আজ রাস্তায় বসার উপক্রম হয়েছে বলে স্থানীয় অনেকে জানান।
উন্নয়নশীল থেকে দ্রুত মধ্যম আয়ে পরিনত হওয়া বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশের সাবেক সফল কৃষিমন্ত্রী শেরপুর-২ এর বর্তমান সাংসদ বাংলার অগ্নিকন্যা হিসেবে খ্যাত বেগম মতিয়া চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা নকলা উপজেলাতে মহৎ ও বৃহৎ কোন উন্নয়ন কাজ জমির মালিকানা বিষয়ে একটি মামলার কারনে বাধাগ্রস্থ হবে, তা কারও কাম্যনয়। তাই সচেতন মহলসহ অনেকের ধারনা স্থানীয় এমপি সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর হস্তক্ষ্যাপ ও প্রচেষ্ঠাতেই হতে পারে এর সুষ্ঠু সমাধান। তাতে উপজেলাবাসী পেতে পারে আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন। আগুনের পুড়া থেকে রক্ষা পেতে পারে নকলাবাসীর জান-মাল।
সর্বসাধারনের দাবী উন্নয়নের অংশ হিসেবে ৮০ ভাগ সম্পন্ন হওয়া ভবনের বাকি কাজ সম্পন্ন করাসহ নকলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশরে জন্য নিয়োগকৃত জনবল যেন নকলাবাসীর জান-মাল রক্ষার কাজে আসে। তাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবনটি নষ্ট হওয়ার হাতথেকে রক্ষা পেয়ে জনকল্যানে আসবে। দ্রুত নকলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভবনের বাকি নির্মান কাজ শেষে আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করা হবে বলে অনেকে আশাব্যক্ত করেন।