শেরপুরের নকলা উপজেলায় সদ্য প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সর্বজন শ্রদ্ধেয় তিন শিক্ষা গুরুর স্মরণে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৪ মার্চ) রাতে ৯নং পৌর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আয়োজনে কলাপাড়া নতুন বাজারে এ স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
যাদের স্মরণে এ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয় তারা হলেন- বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর নেতৃত্বে গড়া স্বাধীন দেশের প্রথম তথা ১৯৭৩ সালে গঠিত পার্লামেন্টের শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ্যদিনের সাধারণ সম্পাদক, হাজি জালমামুদ কলেজ (সরকারি হাজি জালমামুদ কলেজ)-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ প্রয়াত মিজানুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি জালমামুদ কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মোস্তাফিজুর রহমান ও নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের (সরকারি) অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা-গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য প্রয়াত মজিবর রহমান।
৯নং পৌর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কদ্দুস মাস্টারের সভাপতিত্বে ও নকলা প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক নূর হোসাইন-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত শিক্ষক মজিবর রহমান-এর ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ।
এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রীম কোর্টের সাবেক ডেপুটী এটর্নী জেনারেল এডভোকেট খুরশীদুল আলম, উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক ও নকলা উপজেলা ডিভেটিং সোসাইটির সভাপতি আলমগীর আজাদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও নকলা পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মোস্তাফিজুর রহমানের ভাতিজা নূরে আলম সিদ্দিকী উৎপল, পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর (প্যানেল মেয়র) মো. ইন্তাজ আলী, স্থানীয় সমাজ সেবক শহিদুল আলম প্রমুখ।
এ স্মরণ সভায় বক্তারা মরহুম ব্যক্তিদের কর্মময় জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাতের পাশাপাশি তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং মরহুম ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সকলের কাছে দোয়া কামান করেন।
এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক খলিলুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবসিক হল কমিটির সাবেক আহবায়ক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য তৌহিদুর রহমান ডালিম, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা-গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও নকলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন, নকলা প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক, সমাজ উন্নয়ন সংঘের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সহ-সভাপতি মাহফুজুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সহ-সভাপতি মাহাবুর রহমানসহ উপজেলা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুব লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত স্থানীয় সাংবাদিকগন উপস্থিত ছিলেন।
স্মরণ সভা শেষে মরহুমের রোহের মাগফেরাত কামান ছাড়াও দেশ ও জাতির কল্যাণে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করা হয়। সবশেষে উপস্থিতিদের মাঝে তবারক বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ধক্য জনিত কারনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ওই দিন বিকেল ৪ টায় নকলা সরকারি হাজি জালমামুদ কলেজ মাঠে মরহুমের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তাছাড়া ২৩ আগস্ট সোমবার বিকাল ৫:২০ মিনিটের সময় শেরপুর সদর হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। ২৪ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নকলা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পুলিশের একটি চৌকস দল কর্তৃক গার্ড অব অনার প্রদান শেষে জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। তিনি স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান হাজি জালমামুদ কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নকলা থানা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১১নং সেক্টরের অধীনে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭২ সালে নকলা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিষ্ঠানিক লেখাপড়া শেষে ১৯৮৪ সালে নকলা হাজী জালমামুদ কলেজে দর্শন বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। ২০০৯ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
আর মজিবর রহমান ২৫ ডিসেম্বর শনিবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিকাল ৪:৫০ মিনিটের সময় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি নকলা পৌরসভাধীন মাউড়া এলাকার মৃত কছিম উদ্দিন মাস্টারের ছেলে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ-এঁর বড় ভাই ছিলেন। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত নকলা উপজেলা ডিভেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি মৃত্যুকালে স্ত্রী, সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ২৬ ডিসেম্বর রবিবার সকাল ১১ টায় নকলা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মরহুম মজিবর রহমান-এঁর জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।