শেরপুরের নকলা উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের জেগে ওঠা চর ও বিভিন্ন বিলপাড়ের যে দিকে দৃষ্টি যায় দিগন্তজুড়ে শুধু সরিষার হলুদ হাসি নজরে পড়ে। এবছর সরিষার আবাদে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে।
নামে মাত্র শ্রম, সার, কীটনাশক প্রয়োগ ও বিনাসেচে দ্বিগুণ লাভ পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তাছাড়া এবছর সরিষার বাম্পার ফলন ও সরিষার ভালো দাম থাকায় কৃষকরা বেজায় খুশি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর উপজেলায় সরিষা আবাদের অর্জন ছিলো এক হাজার ৮৫০ হেক্টর। গত বছরের অর্জন এক হাজার ৮৫০ হেক্টরকে এবছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো। তবে অবহাওয়া সরিষা আবাদের অনুকূলে থাকায় ও সরিষায় কৃষকের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের প্রচেষ্ঠায় এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪০০ হেক্টর জমিতে অর্জন বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ২৫০ হেক্টর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় ১ হাজার ৬৩০ বিঘা জমিতে উন্নত মানের সরিষা চাষের জন্য ১,৬৩০ জন কৃষককে প্রণোনদা হিসেবে সার ও বীজ দেওয়া হয়। তাছাড়া আগাম আমন ধান কাটার পরে প্রায় সবাই সরিষা আবাদ করায় লক্ষ্যমাত্রার চেয় সরিষা চাষ বেশি হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মনি জানান, এবছর নকলা উপজেলায় বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭, বিনা সরিষা-৪, বিনা সরিষা-৯ ও স্থানীয় টরী-৭ জাতের সরিষা চাষ করা হলেও বারি সরিষা-১৪, বিনা সরিষা-৯ ও টরী-৭ জাতের সরিষা অপেক্ষকৃত বেশি আবাদ হয়েছে। তারা জানান, উপজেলার চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, টালকী, বানেশ্বরদী, উরফা, গনপদ্দী, নকলা, গৌড়দ্বার, চরঅষ্টধর ইউনিয়নসহ সর্বত্রই সরিষা আবাদ হলেও চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর, উরফা ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নে বেশি চাষ হয়েছে।
পর এক কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহামুদুল হাসান মুসা বলেন, বাকি দিনগুলোতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন অর্জন বাড়বে। আগামীতে উপজেলায় সরিষার আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা করছেন।
পসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, আশরাফুল আলমসহ অনেকে জানান, উপজেলায় কর্মরত সব উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন নিজ নিজ কর্ম এলাকার আগাম আমন ধান চাষীদের সরিষা চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাছাড়া কৃষকরা সরকারি প্রণোদনা পাওয়ায় তারা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। ফলে এবছর সরিষা আবাদে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন অনেক বেড়েছে।
ভূরদী খন্দকার পাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি আলহাজ্ব মো. ছাইদুল হক, সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরিষাতে উৎপাদন ব্যয় কম, কিন্তু লাভ বেশি পাওয়া যায়। আমন আবাদরে পরে ও বোরো আবাদের আগে সরিষা চাষ করায় বাড়তি আয় পাচ্ছেন তারা। সরিষা উঠিয়ে ওই ক্ষেতে বোরো ধান রোপন করলে চাষ, সার ও পরিশ্রম কম লাগে, কিন্তু ফলন ভালো হয়। তাছাড়া এবছর সরিষার ভালো দাম থাকায় কৃষকরা বেজায় খুশি। তাই মধ্যবর্তী এই ফসলের দিকে সবাই ঝুঁকছেন। আগামীতে আগাম আমন ধান কাটার পরে সব জমিতে সরিষার আবাদ করা হবে বলে তারা জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, সরিষা চাষের উপযোগী সব জমিকে সরিষা আবাদের আওতায় এনে জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা ও কৃষি পণ্য উৎপাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরিষা চাষ করতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতি হেক্টরে ১.৫ মেট্রিকটন হারে উপজেলায় সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিলো ২ হাজার ৭৭৫ মেট্রিকটন। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বেশি হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩ হাজার ৩৫০ মেট্রিকটন সরিষা উৎপাদন হতে পারে বলে আশাব্যক্ত করছেন কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ।