শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর আওতায় রোপনকৃত উচ্চ ফলনশীল এবং শিল্পে ব্যবহার উপযোগী ও বিদেশে রপ্তানী যোগ্য অন্তত ২০ জাতের বীজ গোলআলু উৎপাদনে সফলতার ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, বিএডিসি হিমাগার নকলার বাস্তবায়নে ২০২১-২২ উৎপাদন মৌসুমে প্রদর্শনী প্লট স্থাপন ও মাল্টি লোকেশন পারফরমেন্স যাচাইয়ের জন্য নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বানেশ্বরদী গ্রামের কৃষক মো. শামসুজ্জামান জুয়েলের জমিতে ২ একর জমিতে প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে বীজ উৎপাদনের জন্য ২০টি উন্নত জাতের আলু পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করা হয়েছে।
উচ্চ ফলনশীল এবং শিল্পে ব্যবহার উপযোগী ও রপ্তানী যোগ্য জাতগুলো হলো- বারি আলু-৩৫, বারি আলু-৩৭, বারি আলু-৪১, বারি আলু-৭৯, আডাটো, সান্তানা, টুইনার, সানসাইন, ফন্টেইন, এডিসন, এস্টারিক্স, ডোনাটা, এভারেস্ট, ক্যারোলাস, গ্র্যানোলা, এলুইটি, প্রিমাভেরা, অ্যালকেন্ডার, মিউজিকা ও ডায়মন্ট।
এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া আলু চাষের অনুকুলে থাকায় গাছের ধরন ও ফলন দেখে রোপন করা জাত গুলোর বীজ আলু উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা আশা করছেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর বিভিন্ন স্তরের কৃষি কর্মকর্তাগন ও বিএডিসির স্থানীয় চুক্তিবদ্ধ আলু চাষীরা।
মানসম্মত বীজ আলু উৎপাদন সংরক্ষন ও কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোড়দার করণ প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা নিয়ে গঠিত ৩০ টি জোনের মাধ্যমে বিএডিসি আলু বীজ উৎপাদন করে আসছে। এর মধ্যে চলতি বছর শেরপুর জেলার নকলায় উচ্চ ফলনশীল এবং শিল্পে ব্যবহার উপযোগী ও বিদেশে রপ্তানী যোগ্য বীজ আলু উৎপাদনের মাত্রা যাচাইয়ের লক্ষ্যে অন্তত ২০ জাতের আলু বীজ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রোপন করা হয়েছে। প্রতিটি গাছের শিকড়ে ছোট ছোট অনেক আলু ধরেছে। বীজ রোপনের পরে ৭৫ দিন থেকে ৮০ দিনের মধ্যে এসব আলু উত্তোলন করে পরবর্তী মৌসুমে রোপনের জন্য বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএডিসি’র কৃষি কর্মকর্তা ও স্থানীয় চুক্তিবদ্ধ আলু চাষীরা।
বিএডিসি হিমাগার নকলা জোনের উপ-সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে এ জোনে ১২ টি বীজ উৎপাদন ব্লকের আওতায় অন্তত ২২ জন কৃষককে বাছাই ও আলু চাষের জন্য চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ আলু চাষীদের মাধ্যমে উপজেলার চরঅষ্টধর ইউনিয়ন, চন্দ্রকোনা ইউনিয়ন, বানেশ্বর্দী ইউনিয়ন ও নকলা পৌরসভার ১৫৫ একর জমিতে বিএডিসি’র আলুবীজ রোপন করা হয়েছে। এসব জমিতে বীজ আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি একরে ৬ মেট্রিকটন হারে মোট ৯০০ মেট্রিকটন। তবে বিদেশী উচ্চ ফলনশীল এবং শিল্পে ব্যবহার উপযোগী ও রপ্তানী যোগ্য ২০ জাতের বীজ আলু প্রতি একরে অনধিক ১৫ মেট্রিকটন থেকে ১৬ মেট্রিকটন বীজ আলু উৎপাদনের আশা করছেন বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় বিএডিসি-এর উৎপাদিত আলু রপ্তানি শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত বছর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) হিমাগার শেরপুর জোনের উৎপাদিত আলু থেকে ৬০ মেট্রিকটন আলু রপ্তানি করার মাধ্যদিয়ে শেরপুর থেকে রপ্তানি কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ বীরমুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক এমপি।
বিএডিসি নকলা হিমাগারের উপপরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলের মাটি আলু চাষের উপযোগী। তাই চলতি মৌসুমে বিএডিসি’র আওতায় উপজেলায় রোপনকৃত উচ্চ ফলনশীল নতুন ২০টি জাতের বীজ আলু উৎপাদনে সফলতার ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছি। আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ সেবাদানসহ নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করছি। ফলন খুবই ভাল হবে এবং এখানকার উৎপাদিত বীজ আলু চাষী পর্যায়সহ দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করবে। যেসব জাতের বীজ আলুর উৎপাদন ভাল হবে, সেগুলো বিএডিসি’র হিমাগারের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে সরবরাহ করা হবে। তাছাড়া বিদেশে রপ্তানী করেও কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা করছেন উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শহীদুল ইসলাম।