জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নব-নিযুক্ত ভাইস চ্যান্সেলর (উপাচার্য) অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর-এঁর সাথে ঢাকাস্থ শেরপুর জেলা সমিতির নেতৃবৃন্দরা সৌজন্য স্বাক্ষাত করে অভিনন্দন জ্ঞাপনসহ ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
ঢাকাস্থ শেরপুর জেলা সমিতির মহাসচিব ও ডিপিডিসি প্রজেক্ট-১ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আব্দুর রাজ্জাক-এর নেতৃত্বে সমিতির নেতৃবৃন্দরা উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর-এঁর সাথে সৌজন্য স্বাক্ষাত পূর্বক ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।
এসময় সমিতির যুগ্ম-মহাসচিব (উপসচিব) মো: আব্দুল্লাহ হারুন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন করিম আহম্মেদ মুন্না, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাকিবুল হক, সহ-শিক্ষা সম্পাদক লতিফুল ইসলাম নিপুল, সদস্য মো. লুৎফর রহমানসহ সমিতির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, শেরপুরের কৃতি সন্তান ড. সৌমিত্র শেখর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নব-নিযুক্ত ভাইস চ্যান্সেলর (উপাচার্য) হিসেবে যোগদানের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নজরুল গবেষণা কেন্দ্র’ এর প্রাক্তন পরিচালক ও ‘নজরুল-অধ্যাপক’ (২০১৪-‘১৭)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদে একাধিকবার (২০১৬, ২০১৮ ও ২০১৯ সাল) নির্বাচিত সদস্য এবং টি.এস.সি-এর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত হয়ে জেলার সুনাম উজ্জল করেছিলেন। ড. সৌমিত্র শেখর সরকারি বৃত্তিপ্রাপ্ত গবেষক হিসেবে মাত্র ঊনত্রিশ বছর বয়সে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হন।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক ড. ক্ষেত্র গুপ্ত-এঁর তত্ত্বাবধানে তিনি বি.সি.এস শিক্ষা কেডার হয়ে ১৯৯৬ সালে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন। এর পরের বছর (১৯৯৭ সাল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ পান।
তিনি ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য শিল্পানুরাগী ছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। কিশোর জীবন থেকেই তিনি লেখালেখির শুরু করেন। সাহিত্য আলোচনায় তিনি প্রয়োগ করেন একান্ত নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। কোন নিদৃষ্ট ব্যক্তির মন জোগানো লেখাকে তিনি মনেপ্রাণে ঘৃনার দৃষ্টিতে দেখেন, মূল কথা মন জোগানো লেখায় তিনি একবারেই বিশ্বাসী নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জীবনে তিনি নাটকের প্রতি অনুরাগী হয়ে ওঠেন, এমনকি বেশ কয়েকটি নাটক-নাটিকাতে অভিনয় করে ও কয়েকটি নাটকের বই লিখে পাঠক, দর্শক ও সংস্কৃতিমনাদের হৃদয়ে স্থান করেনেন।
তবে শেষ অবধি অধ্যাপনাতে আত্মনিয়োগ করেন এবং সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন। শখের বশে বিভিন্ন টেলিভিশনে সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ঠ বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তিনি কাজ করেছেন।
তাঁর রচিত বেশ কিছু প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাবলি ঢাকা ও কলকাতা থেকে প্রকাশত হয়েছে। এর মধ্যে গদ্যশিল্পী মীর মশাররফ (১৯৯৫, ২০০১ ও ২০১৫ সংস্করণ); নজরুল কবিতার পাঠভেদ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০০১); বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (২০০৪); সিভিল সোসাইটি ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০০৪); ব্যাকরণ সন্ধান (২০০৬); কথাশিল্প অন্বেষণ (২০০৬); সত্যেন সেনের উপন্যাসে জীবন ও শিল্পের মিথস্ক্রিয়া (২০০৭); ষাটের কবিতাঃ ভালোবাসার শরবিদ্ধ কবিকূল (২০১০); ভাষার প্রাণ ভাষার বিতর্ক (২০১১); সরকারি কর্মকমিশন ও শিক্ষাভাবনা (২০১২); ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ চেতনার বাতিঘর (২০১৩); নজরুলঃ আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি এবং শিল্পের বোধ (২০১৩); মোসলেম ভারতঃ বিষয় বিশ্লেষণ (২০১৪; ২০১৯); শিক্ষার ধারা পরীক্ষার কারা (২০১৭) উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত রণেশ দাশগুপ্তের রচনাবলি, অন্যান্য প্রকাশনার নির্বাচিত মোসলেম ভারত, সুধীন্দ্রনাথঃ শতবর্ষে আলোছায়া, বিভূতিভূষণঃ কথা ও সাহিত্য, লোক উৎসব নবান্ন, হাসান হাফিজুর রহমানঃ ভবিষ্যতের সাঁকো সহ তাঁর সম্পাদিত বেশ কিছু গ্রন্থের নাম উল্লেখ করার মতো।
ড. সৌমিত্র শেখর বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ ভাষা-সাহিত্যের আজীবন সদস্য। গবেষণার জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিনস এওয়ার্ড (২০০১), ময়েনউদ্দীন ফাউন্ডেশন পদক (২০০৮) ও নজরুল পদক (২০১৪) লাভ করে শিক্ষা খাতে শেরপুর জেলাকে দেশে-বিদেশে পরিচয় করিয়ে দেন।
উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ড. সৌমিত্র শেখর দেশব্যাপী আলো ছড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছেন। তিনি শেরপুর জেলাতো বটেই বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের জন্য শিক্ষা জগতে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন বলে ঢাকাস্থ শেরপুর জেলা সমিতির নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ শিক্ষানুরাগী মহল মনে করছেন।
(আংশিক সংগৃহীত)