শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই ডাক্তার প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রাকটিসে ব্যস্ত থাকায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। তাদের বিরুদ্ধে নীতি বহির্ভূত জটিল ও কঠিন রোগের অপারেশনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের স্বজনরা।
জানা গেছে, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৮৩ সালে। চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে গত জানুয়ারী মাসে ৩১ শয্যা থেকে ১৯ টি শয্যা বাড়িয়ে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হয়। কিন্তু ডাক্তারদের অনুপস্থিতিসহ নানা অনিয়মের কারনে ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে কর্মরত ডা. মো. মাজেদুর রহমান ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন মাঝেমধ্যেই হাসপাতালে হাজিরা দিয়েই চলে যান কর্মস্থলের বাইরে স্থানীয় ও জেলা শহরের প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে। এমনকি ডা. মোঃ মাজেদুর রহমানের অপারেশন করার সনদ না থাকলেও মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের অপারেশন করে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। এতে একদিকে যেমন রোগীরা প্রতারনার শিকার হচ্ছেন, অপরদিকে সরকারি নিয়ম অমান্য করে প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রাকটিসে ব্যস্ত থাকায় হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা সেবা না পেয়ে বাড়ী ফিরছ্নে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে সেবা বঞ্চিত রোগীরা জানান, সকাল দশটার পরে আসলে বেশিরভাগ সময়ে ডাক্তারের দেখা মেলেনা। যদিও ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায়, তারা স্থানীয় ও জেলা শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট চেম্বারে যেতে পরামর্শ দেন। এছাড়া এখানে বিনামুল্য প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়না।
শেরপুর জেলা শহরের দারুস শিফা ইসলামিয়া জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মোঃ লুৎফর রহমান সোহেল বলেন, রোগিদের স্বার্থে ডাক্তাররা আমার হাসপাতালে আসেন। যেকোনো অপারেশন করেন। তবে ডাক্তারদের কোনো নীতিমালা থাকলে সেটা তাদের ব্যাপার।
এবিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ডাক্তার মোঃ মাজেদুর রহমান জেলা শহরের দারুস শিফা ইসলামিয়া জেনারেল হাসপাতালে সাম্প্রতিক একটি জটিল অপারেশন করার পর সাংবাদিকদের বলেন, আমি নিয়ম মেনেই এখন রোস্টার ডিউটি করছি। সার্জারি সনদ নাথাকার বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
তবে প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রাকটিসের কথা স্বীকার করে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ জসীম উদ্দিন দাবি করে বলেন, হাসপাতালের কাজ শেষ করে জরুরী কোনো রোগী দেখার জন্য ক্লিনিকে আসা হয়।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. এ.কে.এম আনওয়ারুর রউফ বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক কেউ হাসপাতালের বাইরে প্রাকটিস করতে পারবেন না। এছাড়া উচ্চতর ডিগ্রি ব্যতিত কেউ জটিল ও কঠিন রোগের অপারেশন করতে পারবেন না। তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আমিও পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা। এমনি চিত্র নজরে পড়ে জেলার অন্য উপজেলাতেও। ডাক্তার ছাড়াও কোন কোন মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট নিজে খোলে বসেছেন প্রাইভেট ক্লিনিক। যে সেবা গুলো হাসপাতালে পাওয়ার কথা, সেইসব সেবা নিতে পাঠানো হচ্ছে নিজেদের ক্লিনিকে! এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। এসব অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করতে হাতে রাখা হয়েছে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলকে।