শেরপুরে ডিজিটাল সেন্টারের ১১ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে প্রামান্য চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের সহযোগিতায় এ প্রামান্য চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও কেক কাটা অনুষ্ঠান করা হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মুকতাদিরুল আহমেদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রামান্য চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখে তথ্য প্রযুক্তি অধিদপ্তর শেরপুর জেলা প্রোগ্রামার তারেকুল ইসলাম। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- শেরপুর সদর উপজেলার ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের পক্ষে শফিকুল ইসলাম, নকলা উপজেলার ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের পক্ষে সেলিম রেজা, নালিতাবাড়ী উপজেলার ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের পক্ষে ইসমত আরা প্রমুখ।
উদ্যোক্তা বক্তারা বাঙালি জাতির পিতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাগনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনায় হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুবনাকে ডিজিটাল সেবাদান ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা শিক্ষিত তরুন-তরুণীদের পথপ্রদর্শক সজিব ওয়াজেদ জয়-এঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের মাধ্যমে ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে সারাদেশে দারিদ্র্য মোচন, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অধিকাংশ অর্জনে এই ডিজিটাল সেন্টারের ভূমিকা প্রশংসনীয় বলে তারা দাবী করেন।
তারা বলেন, গ্রামাঞ্চলে প্রযুক্তি ও ডিজিটাল অবকাঠামোর উপস্থিতির কারণে গ্রাম ও শহরের ব্যবধান ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে আসছে। ডিজিটাল অবকাঠামো গ্রামীণ গতিশীলতা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে, তা বলাই বাহুল্য। ২০১৮ সালে সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ শ্লোগানে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের বাস্তবায়ন চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তথা বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাগন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন বলে তারা জানান। তারা আরো জানান, করোনা অতিমারির সময়ে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলো থেকে সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা বাস্তবায়নে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
বক্তারা বলেন, আগামী দিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তিগুলো নিয়ে কাজ করতে হলে দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই। ডিজিটাল সেন্টারগুলো দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সেই জনবল সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো এখন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন তাদের দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়, সেটা আজ বাস্তবতা। তারা এখন ঘরে বসে সরকারের উন্নয়ন মূলক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতি হিসেবে ডিজিটাল সেন্টারকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের আরও দ্রুত এগোতে হবে। গ্রাম হবে শহর- এই স্বপ্নপূরণের দোরগোড়ায় আমরা প্রায় পৌঁছে গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
দেশে ও জাতির উন্নয়ন ছাড়াও তারা কিছু সমস্যা তুলে ধরেন। সমস্যা গুলোর মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হলো- দীর্ঘ ৫টি বছর একজন ইউপি চেয়ারম্যানের ত্বত্তাবধানে তাদের কাজ করতে হয়। ফলে স্বাভাবিক কারনেই ইউপি চেয়ারম্যানগনের সাথে তদের একটি সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন পরবর্তী মেয়াদে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানগন ইউডিসিদেরকে বিদায়ী চেয়ারম্যানের একান্ত অনুসারী মনে করে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। অনেক সময় নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানগন বা তার অনুসারীরা তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাবে ব্যর্থ অভিযোগ উপস্থাপন করেন। এতে জনগণকে ডিজিটাল সেবাদানের ক্ষেত্রে ইউডিসিগনকে বেশ বেগ পেতে হয়। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা। ইউডিসিগনের অভিভাবক হিসেবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার বিনীত আবেদন জানানো হয়।
আলোচনা সভা ও প্রামান্য চিত্র প্রদশর্নীর পরে ডিজিটাল সেন্টারের ১১ বছর পূর্তি উপলক্ষে কেক কাটা হয় এবং সেরা উদ্যোক্তাগনের মাঝে পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
এসময় জেলা, উপজেলা প্রশাসনের কর্ম কর্তাগন, জেলার বিভিন্ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাগন, স্থানীয় সাংবাদিকগন উপস্থিত ছিলেন।
সব শেষে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, সভাপতি, বিশষ অতিথি ও ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাগন এক ফ্রেমে বন্ধী হয়ে স্মৃতি ধরে রাখতে ফটো সেশনে অংশ নেন।