শেরপুর জেলায় আবারো বন্য এক পুরুষ হাতির মরদেহ উদ্ধার করেছে বনবিভাগের কর্মীরা। শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) ভোরে নালিতাবাড়ী উপজেলার ‘পানিহাতা-মায়াঘাষি দুটি গ্রামের সীমান্তের এক ধানক্ষেত থেকে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে শেরপুরের গারো পাহাড়ে দুটি হাতির মৃত্যু হলো। গত ৯ নভেম্বর শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী রানিশিমূল ইউনিয়নের মালাকোচা গ্রামে বিদ্যুতের ফাঁদে পড়ে একটি পুরুষ হাতি মারা যায়।
বিভিন্ন তথ্য মতে, গত ৬-৭ বছরে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের গারো পাহাড়ে বিলুপ্তির মহাঝুঁকিতে থাকা অন্তত ২৬টি হাতি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন এবং বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন- হাতিটি কেন বা কিভাবে মারা গেছে; ময়না তদন্ত ছাড়া এ বিষয়ে এখন নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছেনা।
পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় অনেকে জানান, মৃত হাতিটির সুরতহাল দেখে বুঝা যায়, অসুস্থ্যতা জনিত কারনে ২-৩ বছর বয়সী এ পুরুষ হাতিটি মারা যেতে পারে। তবে পরীক্ষা করার পর হাতিটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে তারা মনে করছেন।
পরিবেশবাদী সংগঠন বার্ড কনজারভেশন অব শেরপুর’র সভাপতি সুজয় মালাকার জাননা, তারা সকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন স্থানীয় কয়েকজন মিলে হাতিটিকে মাটিচাপা দিতে একটি বড় গর্ত করা হচ্ছে। মৃত হাতিটিকে মাটি চাপাদিতে প্রবীণ মানকিন নামের একজন বাঁধা দেন। এমন সময় বার্ড কনজারভেশন অব শেরপুর’র নেতৃবৃন্দরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তারা চলে যায়।
ঘটনাস্থলে থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এভাবে হাতি মরতে থাকলে, দেশ থেকে হাতি বিলুপ্ত হতে বেশি দিন লাগবে না। তিনি আরো বলেন, সরকারি বনের জায়গায় চাষবাস করার কথা নয়। এখানে বন থাকলে এ অবস্থা হতো না; তাই গারো পাহাড়ের পাদদেশীয় এলাকার সরকারি পতিত জমিতে বন গড়ে তুলার আহবান জানান তিনি।
বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের গোপালপুর বীট কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, হাতি অত্যন্ত নিরীহ একটি প্রাণী। বিলুপ্তির মহাঝুঁকিতে থাকা হাতির যেনো কোনো প্রকার ক্ষতি না হয়, এরজন্য বনবিভাগ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
ময়মনসিংহের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ.কে.এম রহুল আমিন জানান, হাতি রক্ষার ব্যাপারে স্থানীয় ও বিভিন্ন পেশাশ্রেনীদের অংশ গ্রহনে এরইমধ্যে ২০ থেকে ২৫টি সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করা হয়েছে। হাতিকে মেরে ফেললে বন বিভাগ থেকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান, ৯ নভেম্বর শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী রানিশিমূল ইউনিয়নের মালাকোচা গ্রামের হাতি মৃত্যুর ঘটনায় ৪ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। দ্রুত সয়ের মধ্যে এর বিচার কার্য শুরু হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। গারো পাহাড়ে হাতি রক্ষার জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।