শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন

অসহায় অচল এক ভিক্ষুকের সহায় যখন আরেক ভিক্ষুক!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • প্রকাশের সময় | শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১
  • ৩১৬ বার পঠিত

ও আল্লাহ আমারে নিয়া যাওগা! এই পিতিবিতে আমার কেউ নাইকা! আমারে একটা পুলা দিছিলা, ওই পোলাডাও আমারে দেহে না! সরকারও আমারে কিছু দেয়না! ও বাবা-গো, ও মা-গো আর বাচপার পাইতাছিনা! আমারে এতো কষ্ট দিতাছ কেরে? দুই দিন ধইরা খাই না। আর সহ্য ওইতাছে না। খিদার চুডে মইরা যাইতাছি। আইন্নেরা আমারে কয়ডা খাবার দেইন। এভাবেই চিৎকার করে কান্নাকাটি করছেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার এক বৃদ্ধ অসহায় অচল সুরুজ মিয়া।

সুরুজ মিয়া উপজেলার টালকী ইউনিয়নের তালতলা বাজারের পরিত্যক্ত দুই দোকানের মাঝখানে খোলা স্থানে খড়রের বিছানায় পড়ে থেকে চিৎকার করে কান্নাকাটি করলেও তার পাশে নেই কেউ। জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) না থাকায় পাচ্ছেনা সরকারি কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা। অচল সুরুজ মিয়া পাঠাকাটা ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও দীর্ঘদিন ধরেই বসবাস করতেন টালকী ইউনিয়নে।

এই বৃদ্ধ অসহায় অচল সুরুজ মিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন ফুলে বেগম নামে এক ভিক্ষুক। ফুলে বেগমকে সুরুজ মিয়ার জন্য আল্লার অশেষ রহমত বলেই মনে করছেন অনেকে।

স্থানীয়রা জানান, ভিক্ষুক ফুলে সারাদিন ভিক্ষা করে যা পান, তা রান্না করে সন্ধ্যায় নিজে খাবার আগে কিছু খাবার নিয়ে পৌঁছেন সেই অচল বৃদ্ধ সুরুজের কাছে।

জানা গেছে, ১০ বছর আগে পাঠাকাটা মৌজায় আধা কাঠা (আড়াই শতাংশ) জমি কিনে, সেখানে ছোট একটি টিনের ছাপড়া ঘর উঠিয়ে বসবাস করতেন সুরুজ মিয়া। পেটের দায়ে ছেলে আবু হানি ও স্ত্রীকে রেখে চলে যান রাজধানী ঢাকায়। চলতি বছর ঢাকায় একটি দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পান। চিকিৎসার অভাবে আঘাত প্রাপ্ত ডান পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুলটি কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। এর পরথেকে নিয়মিত ড্রেসিং ও প্রয়োজনীয় ঔষুধ- পথ্যের অভাবে পায়ে পঁচন ধরার উপক্রম। এমতাবস্থায় ছেলের সেবার আশায় গত ২ মাস আগে ফিরে আসেন নিজ এলাকা নকলায়। নকলায় এসে দেখেন ছেলে আবু হানি তার রেখে যাওয়া শেষ সম্বল আড়াই শতাংশ জমিটুকু বিক্রি করে চলে গেছে শ্বশুর বাড়িতে।

পরে কোন উপায় নাপেয়ে সুরুজ মিয়াও ছেলের শ্বশুড় বাড়িতে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু ছেলের স্ত্রী বৃদ্ধ অসহায় অচল সুরুজ মিয়ার অসহীয় যন্ত্রনায় কান্নাকাটি ও তার বিছানাপত্র পরিষ্কারকে বাড়তি যন্ত্রনা মনে করে ৫দিন পরেই তাকে তাদের বাড়ি থেকে বেড় করেদেয়। এরপরে নিরুপায় হয়ে খেয়ে না খেয়ে বিনা সেবা-যত্নে তালতলা বাজারের পরিত্যক্ত দুই দোকানের মাঝখানে খোলা স্থানে খড়রের বিছানায় পড়ে দিনাতিপাত করছেন সেই বৃদ্ধ অচল সুরুজ মিয়া। এর পরথেকে তার ছেলে আবু হানি তার বাবা সুরুজ মিয়ার আর কোন খোঁজ খবর নেয় না। এদিকে এনআইডি জটিলতায় সরকারের পক্ষ থেকেও কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না।

সুরুজ মিয়া জানান, তিনি মুক্তিযোদ্ধের পরের বছর (১৯৭২ সাল) বিয়ে করেছেন। আবু হানি নামে তার এক কর্মজীবী (রাজমিশ্রি) ছেলে থাকলেও, সে বাবার শেষ সম্বল আড়াই শতাংশ জমিটুকু বিক্রি করে চলে গেছে শ্বশুর বাড়িতে। ছেলে তার শ্বশুর বাড়িতে স্ত্রী-বাচ্চা নিয়ে ভালোভাবে দিনাতিপাত করলেও, বাবার খোঁজ খবর নেয়না। তবে এই বৃদ্ধ অসহায় অচল সুরুজ মিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন ফুলে বেগম নামে এক ভিক্ষুক। ফুলে বেগমকে সুরুজ মিয়ার জন্য আল্লার অশেষ রহমত বলেই মনে করছেন অনেকে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভিক্ষুক ফুলে সারাদিন ভিক্ষা করে যা পান, তা রান্না করে সন্ধ্যায় নিজে খাবার আগে কিছু খাবার নিয়ে পৌঁছেন সেই অচল বৃদ্ধ সুরুজের কাছে। এমন ঘটনা দেখে স্থানীয় এক মুদির দোকানদার জিয়ারুল ইসলাম প্রতিদিন সকালে সুরুজকে রুটি, কলা খাবার দেন। তাছাড়া শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান ও স্থানীয় আবু সাঈদ মিয়ার সহযোগিতায় তালতলা বাজারের এক ঔষুধ বিক্রেতা পল্লী চিকিৎসক বাবুল মিয়া মাঝে মধ্যে সুরুজ মিয়ার কাটা পা ড্রেসিং করে দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ঔষুধ কিনেদেন।

প্রশাসনের কাছে স্থানীয়দের দাবী, জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) না থাকলেও বিশেষ বিবেচনায় সুরুজ মিয়াকে জরুরি ভিত্তিতে বয়স্ক ভাতা বা প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হউক। সুরুজ মিয়ার শেষ বয়সের মৌলিক চাহিদা গুলো পূরণ করার জন্য জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিগন দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102
error: ভাই, খবর কপি না করে, নিজে লিখতে অভ্যাস করুন।