ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার বারমারী সাধু লিওর খ্রিস্টধর্মপল্লীতে জীবন্ত ক্রুশের পথ ও মহা খ্রিস্টযাগসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে ২৪তম তীর্থ উৎসব শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে সমাপ্ত হয়েছে।
শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) দুপুর ১২ টায় মহা খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে ২৪তম তীর্থ উৎসবে সমাপ্তি ঘোষণা করেন ময়মনসিংহ খ্রিস্টধর্ম প্রদেশের বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি। শান্তিপূর্ণভাবে তীর্থ উৎসব সমাপ্ত হওয়ায় তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনসহ ধন্যবাদ জানান।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) তীর্থ উৎসব উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ১৫ হাজার রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টভক্তগন ২৪তম এ তীর্থ উৎসবে অংশ গ্রহন করেন। ‘ভ্রাতৃত্ব ও মিলন সমাজ গঠনে ফাতেমা রাণী মা মারিয়া’ এ মূলসুরে বিকেলে পাপ স্বীকার ও মহা খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে তীর্থ উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধান বক্তা বাংলাদেশের কার্ডিনাল পেট্রিক ডি রোজারিও সিএসসি। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে প্রায় দুই ঘন্টা ব্যাপী সব বয়সের ও সব পেশাশ্রেণির খ্রিস্টভক্তরা পাপমুক্ত হতে জ্বলন্ত মোমবাতি হাতে আলোর মিছিলে অংশনেন। তীর্থ উৎসব উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই আলোর মিছিল করা হয়। এছাড়া সাক্রান্তের আরাধনা, গীতিআলেখ্য ও নীশি জাগরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ফাতেমা রানী মা মারিয়ার তীর্থস্থলে পাপ স্বীকারের মধ্য দিয়ে এবং ‘ত্যাগ, সেবা ও প্রেমের রাণী, ফাতেমা রাণী মা মারিয়া’ এই মূল প্রতিপাদ্য বিষয়কে ধারন করে এবছর ওই ফাতেমা রানীর তীর্থস্থলে ২৪তম তীর্থ উৎসব পালিত হয়। ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের দুইদিন ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যদিয়ে ওই তীর্থ উৎসবের শুভসূচনা ও সন্ধ্যায় সান্ধ্যকালীন খ্রিস্টযাগ অনুষ্ঠিত হয়।
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর অতিমারীর কারনে ২৩তম তীর্থ উৎসবটি একবারেই সংক্ষিপ্ত পরিসরে করা হয়েছিলো। এবার করোনার প্রভাব কমার কারনে তীর্থ উৎসবটি আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। শেরপুর জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশিদ, পুলিশ সুপার হাসান নাহিদ চৌধুরী, নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান লেবু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেলেনা পারভীন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল উপস্থিত হয়ে ২৪তম তীর্থ উৎসবের সার্বিক খোঁজখবর নেন।
এবারের তীর্থ উৎসবে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। তীর্থোৎসবে আসা ভক্তরা যেন শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নে তাদের ধর্মীয় কাজ সম্পন্ন করতে পারেন সেজন্য পুলিশ, বিজিবি, ব্যাটালিয়ান, আনসারসহ সাদা পোশাকে বিভিন্ন নিরাপত্তা কর্মীর সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল বলে জানা গেছে। এই উৎসব যথাযথ মর্যাদায় ও নির্বিঘ্নে পালনের জন্য নিরাপত্তা কর্মীর পাশাপাশি সার্বক্ষনিক সিসি টিভি ক্যামেরা দ্বারা সার্বিক ব্যবস্থা মনিটরিং করা হয়েছে বলে আয়োজকরা জানান। এই তীর্থ উৎসবে অন্য ধর্মের লোকদেরও অনেক কিছু শিখার আছে বলে জানালেন হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের অনুসারীসহ বিভিন্ন ধর্মের সুশীল নেতৃবৃন্দ।