শেরপুরের নকলায় বার বার মিথ্যা মামলায় জড়ানো, অজ্ঞাত শক্তির প্রভাব খাটিয়ে বার বার হাসপাতাল থেকে ৩২৬ ধারায় সনদ তুলে নিরিহ পরিবারকে বাড়ি ছাড়া করে রাখার বিরোদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী দুই পরিবারের সদস্যবৃন্দসহ এলাকাবাসী।
রবিবার নকলা প্রেসক্লাবের অফিস কক্ষে ভূক্তভোগী পরিবারের একমাত্র কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মেরী খাতুন তার ২ বৃদ্ধ চাচা, চাচাতো ও ফুফাতো ভাই এবং পরিবারপরিজনসহ এলাকাবসীদের নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
জানা গেছে, উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভুরদী নয়ানিপাড়া এলাকায় একযুগ আগে রেজিষ্ট্রেশন মূলে ক্রয়কৃত জমির তথ্য গোপন রেখে ভূয়া তথ্যদিয়ে একই জমি অন্যকে রেজিষ্ট্রেশন মূলে দান করা এবং ভুল তথ্য দিয়ে অন্যের রেজিষ্ট্রেশন মূলে ক্রয়কৃত জমি নিজের নামে খারিজ করার পরে একযুগ আগে ক্রয়সূত্রে জমির মালিক নিরিহ পরিবারের সদস্যদের বার বার মিথ্যা মামলায় জড়ানো, টাকার দাপটে বা অজ্ঞাত শক্তির প্রভাব খাটিয়ে হাসপাতাল থেকে বার বার ৩২৬ ধারায় সনদ তুলে নিরিহ পরিবারকে বাড়ি ছাড়া করে রেখে ভোগদখলীয় জমি জবর দখল করার পায়তারা করার বিরোদ্ধে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
এসময় মেরীর চাচা ভুক্তভোগী কাগজ আলী ও আন্তাজ আলীছাড়াও ভুক্তভোগী আরো এক অসুস্থ চাচার প্রতিনিধি, ৬ চাচাতো ও ফুফাতো ভাই-বোনসহ এলাকাবাসী ও নকলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকগন উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মেরী খাতুন লিখিত বক্তব্য পাঠ করে উপস্থিত সাংবাদিক ও অন্যান্যদের শুনান। লিখিত বক্তব্যে মেরী খাতুন বলেন, আমি এলাকার একজন নিরিহ শান্ত প্রকৃতির কলেজ পড়ুয়া মেয়ে। আমার বাবা-মা বৃদ্ধ। ছোট এক ভাই থাকলেও সে অবুঝ বটে। আমার দাদা ফুলমাহমুদ শেখ মৃত্যুকালে ১ স্ত্রী আলফান বিবি, ৫ ছেলে আশরাফ আলী, আক্কাছ আলী, কাগজ আলী, আন্তাজ আলী ও মোন্তাজ আলী এবং ৩ মেয়ে আলেছা বেগম, কুলেছা বেগম ও কমলা বেগমকে রেখে যান। তিনি মৃত্যুকালে ১৫৫ দাগে ১০ শতাংশ জমি বিনা রেজিস্ট্রেশনে রেখে যান। ওই ১০ শতাংশ জমি থেকে ইসলামী আইন ও হিস্যা অনুযায়ী স্ত্রী আলফান বিবি ১.২৫০ শতাংশ, প্রতি ছেলে ১.৩৪৬ শতাংশ এবং প্রতি মেয়ে ০.৬৭৩ শতাংশ হারে জমি প্রাপ্য হন।
ফুলমাহমুদ শেখ মারা যাওয়ার কিছুদিন পরে, তার রেখে যাওয়া ওয়ারিশানগন নিজ নিজ জমি বুঝে নিয়ে ভোগ দখল করে আসছেন। মৃত ফুলমাহমুদ শেখের ছেলে মোন্তাজ আলীকে ফুলমাহমুদ শেখের স্ত্রী আলফান বিবি তার অংশের ১.২৫০ শতাংশ জমি ৬/৮/১৯৯৫ তারিখে রেজিষ্ট্রেশন মূলে দান করেন। বাকি জমির ৩ বোন আলেছা বেগম, কুলেছা বেগম ও কমলা বেগম তাদের মোট অংশ ২.০১৯ শতাংশ তাদের বড় ভাই কাগজ আলীর কাছে ১৪/১২/২০০৮ তারিখে বিক্রি করেন।
অন্যদিকে মোন্তাজ আলীর নিজের অংশ ১.৩৪৬ শতাংশ ও মায়ের কাছ থেকে রেজিষ্ট্রেশন মূলে পাওয়া ১.২৫০ শতাংশসহ মোট ২.৫০ শতাংশ জমি তার ছেলে (মেরীর ছোট ভাই) জুয়েলকে রেজিষ্ট্রেশন মূলে দান করেন। ফলে মোট ৪.৬১৫ শতাংশ বেচা-কেনা হয় এবং বাকি থাকে ৫.৩৮৫ শতাংশ জমি। এই ৫.৩৮৫ শতাংশ জমি ৪ ভাই আশরাফ আলী, আক্কাছ আলী, কাগজ আলী ও আন্তাজ আলী প্রতি ভাই ১.৩৪৬ শতাংশ করে ওয়ারিশান অংশিধার হিসেবে মালিক হয়ে ভোগ দখল করে আসছেন।
মোট ১০ শতাংশ জমির হিস্যা অনুযায়ী প্রাপ্য ও ক্রয় বিক্রয় মূলে আশরাফ আলী ১.৩৪৬ শতাংশ, আক্কাছ আলী ১.৩৪৬ শতাংশ, অন্তাজ আলী ১.৩৪৬ শতাংশ, কাগজ আলী তার ৩ বোনের ২.০১৯ শতাংশ ও নিজের অংশসহ মোট ৩.৩৬৫ শতাংশ এবং জুয়েল মিয়া ২.৫০ শতাংশ জমি প্রাপ্য হয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোগ দখল করে আসছেন।
কিন্তু আশরাফ আলী গোপনে তার ১.৩৪৬ শতাংশ জমির পরিবর্তে তার মেয়ে আনোয়ারাকে ১৫৫ দাগের ১০ শতাংশ জমি রেজিষ্ট্রেশন মূলে দান করেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও প্রতারনা মূলক কর্মকান্ড। এটা আমার বাবা ও চাচাদের সরলতার সুযোগে জমি জবর দখল করার পায়তারা মাত্র। এবিষয়ে ভূমি অফিসে তাদের ভূয়া খারিজটি ভাঙ্গার জন্য বেশ কয়েক মাস আগে একটি মিস কেস আবেদন করা হয়েছে। খুবদ্রুত ভুল তথ্যের খারিজটি ভেঙ্গে যাবে বলে তিনি মনে করছেন।
মেরী আরো বলেন, তাদের খারিজটি হাতে পাওয়ার পরেই তারা হঠাৎ করেই ওই ১০ শতাংশ জমি নিজের বলে দাবী করে এবং হামলা মামলা করে আমাদের সকলকে বাড়ি ছাড়া করে রাখার অপচেষ্টা চালায়। এদিকে আনোয়ারার মেয়ে পারভীন ও মেয়ের জামাতা সালাউদ্দিন শেরপুর সদর হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত থাকায় অজ্ঞাত ক্ষমতার বলে তারাই উল্টা আমাদের বিরোদ্ধে মামলা করে এবং ৩২৬ সনদ তুলে আমার ছোট ভাই জুয়েলকে ২৬ দিন অযথা জেল খাটায়। যা একান্তই হাসপাতালের ক্ষমতা ও অর্থের দাপটেই সম্ভব হয়েছে বলে তিনি মনে করছেন।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, পারভীন ও সালাউদ্দিন সালাউদ্দিনের অত্যাচারে প্রতিবেশীরা আজ অতিষ্ট। তাদের যেকোন অবৈধ কাজে যেকেউ দ্বিমত পোষন করলেই তাদেরকে জেল জরিমানা খাটতে হয়। এর উজ্জল প্রমান ২০১৩ সালে প্রতিবেশী কলেজ শিক্ষার্থী কাউসারকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে এবং শেরপুর হাসপাতাল থেকে ৩২৬ সনদ তুলে ৪১ দিন জেলা খাটায়। সেসময় শেরপুর সদর হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত পারভীন ও তার স্বামী সালাউদ্দিনের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে এলাকাবসীরা জেলা, উপজেলাসহ ইউনিয়ন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় মাতাব্বরদের কাছে গণস্বাক্ষর সম্বলিত সুষ্ঠ বিচারের আবেদন করলে তারা কাগজ পত্র মূলে সুষ্ঠ বিচার করলেও তা পারভিনরা মানেনা।
শেরপুর সদর হাসপাতালে নার্স হিসেবে দীর্ঘ্যদিন ধরে কর্মরত পারভীন ও তার স্বামী আমাদের বার বার মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করছে। চাাচতো ভাই ও সহোদর ভাই তাদের করা হয়রানি মূলক মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পরে এরই মধ্যে এজমা রোগী আমার বৃদ্ধ বাবাকে জড়িয়ে মামলা করে। সরল মনে এ মামলায় হাজিরা দিতে গেলে তাকেও হাজতে প্রেরন করা হয়। তিনি এখনো হাজত বাসে আছেন। এটা শেষ হতে না হতেই পারভীন ও তার স্বামী আরো একটি মামলা করবে বলে মামলা প্রস্তুত করেছে বলে জানা গেছে।
এমনকি সদর হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত থাকায় পারভীন ও তার স্বামী সালাউদ্দিন অজ্ঞাত শক্তির প্রভাবে আরো কয়েকটি ৩২৬ ধারার সনদ তুলার কাজ শুরু করেছে বলে বিশ্বস্থ সূত্রে জানতে পেরেছেন মেরী ও তার পরিবারের সদস্যরা। এমতাবস্থায় ৩২৬ ধারার সনদ বানিজ্যের অপশক্তি চিহৃত করে শাস্থির আওতায় আনা এবং এলাকার শান্তি বিরাজের স্বার্থে আনোয়ারার নামে ভূয়া খারিজটি ভেঙ্গে দেওয়া জরুরি বলে অনেকে মনে করছেন। তা না হলে মেরী, কাউসার, আক্কাছ আলী, কাগজ আলী, আন্তাজ আলী ও মোন্তাজ আলী, আলেছা বেগম, কুলেছা বেগম ও কমলা বেগমের মতো নিরিহ মানুষ গুলো সারাজীবন হয়রানির স্বীকার হবেন। নি:শ্ব হয়ে যাবেন অনেক অসহায় পরিবার। তাই ভূয়া তথ্যে করা খারিজটি ভেঙ্গে দেওয়াসহ ৩২৬ সনদ বানিজ্যের চক্রটি জনসম্মূখে উন্মুক্ত করতে সাংবাদিকরা গুরুত্ব পূর্ণ ভুমিকা পালন করবেন বলে আশা করেন ভূক্তভোগী পরিবারগুলো। তারা বলেন, সাংবাদিকদের লেখনির মাধ্যমে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন তারা।