শেরপুরে নকলায় এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজমুল ইসলাম (৪৩) কর্তৃক সৎ মা ও ভাই-বোনের তথ্য গোপন রেখে ভুল তথ্য সম্বলিত আদনের প্রেক্ষিতে সরলমনে ওয়ারিশান সনদ দেওয়ায় ফেঁসে গেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ২নং নকলা ইউনিয়ন পরিষদের দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান সোজা (৫০)।
চতুর নাজমুল ইসলাম উপজেলার ধনাকুশা গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে ও ছত্রকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
জানা গেছে, উপজেলার নকলা ইউনিয়নের ধনাকুশা গ্রামের আশরাফ আলী তার দুই স্ত্রী ও দুই স্ত্রীর দিকের ২ ছেলে ও ৫ মেয়েসহ ৭ সন্তান রেখে ২০০০ সালে মারা যান। এর পর তার সন্তানেরা বিগত ২০১৩ সালের ২৬ জুন নকলা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান সোজার সাক্ষরিত ওয়ারিশান সনদ উত্তোলন করেন। ওই ওয়ারিশান সনদে আশরাফ আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম বিবিসহ ৭ ছেলে-মেয়ে যথাক্রমে নাজমুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, আসমা খাতুন, রোখসানা বেগম, মনোয়ারা বেগম, কামরুন্নাহার পারভীন ও শামছুন্নাহার শিল্পীর নাম সঠিকভাবে ওয়ারিশান হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই শিক্ষক নাজমুল ইসলাম ও তার বোন কামরুন্নাহার পারভীনের দেওয়া ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ইউপি চেয়ারম্যান সোজা মৃত আশরাফ আলীর এক স্ত্রী মৃত নুরজাহান বেগম, ১ ছেলে নাজমুল ইসলাম ও ১ মেয়ে কামরুন নাহার পারভীনের নাম উল্লেখ করে মনের অজান্তে আরো একটি ওয়ারিশান সনদ দিয়েছেন।
এই ভুয়া ওয়ারিশান সনদ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তা সঠিক বলে ব্যবহার করে ওই ২ ভাইবোন বেশ কিছু জমি নিজেরদের নামে খারিজ করে নেন। বিষয়টি জানাজানি হলে আশরাফ আলীর ভুক্তভোগী স্ত্রীর পরিবারের মেয়ে শামছুন্নাহার শিল্পী বাদী হয়ে শেরপুর সি.আর আমলী আদালতে প্রতারক বোন কামরুন্নাহার পারভীন ও ভাই নাজমুল ইসলামকে আসামী করে এবং ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান সোজাকে সহযোগী আসামি করে একটি নালিশী মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কামরুন্নাহার পারভীন ব্যতীত ইউপি চেয়ারম্যান সোজা ও শিক্ষক নাজমুল ইসলাম জামিন চেয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে, বিজ্ঞ আদালত তাদের দুইজনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আলমগীর কিবরিয়া কামরুল জানান, ওয়ারিশান সনদ জাল-জালিয়াতির মামলায় সুবিধাভোগী ২ ভাই-বোন ও ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজসক্রমেই ভুয়া ওয়ারিশান সনদ তৈরি করে তা সঠিক বলে ব্যবহার করে ওই ২ ভাইবোনে নিজেদের নামে জমি খারিজ করে নেন। কাজেই অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় তাদের জামিন নামঞ্জুর করে হাজতে দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মুন্না বলেন, নাজমুল ইসলাম ও তার বোন কামরুন্নাহার পারভীনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান সোজা ওই ওয়ারিশান সনদ দিয়েছেন। কাজেই চেয়ারম্যান ওই ঘটনায় জড়িত নন। চেয়ারম্যানকে সামনে রেখে তারা বাড়তি সুবিধা নিতেই অন্যায়ভাবে একজন সম্মানিত লোককে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অভিযোগটি জাল-জালিয়াতির নয়। তা বড়জোর তথ্যগত ভুল হয়েছে বলা যেতে পারে। তাছাড়া ওই মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ২নং নকলা ইউনিয়ন পরিষদের দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান সোজা ছিলেন সহযোগী আসামি মাত্র।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উরফা ইউপির চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান সোজা বলেন, ওয়ারিশান সনদের কোন রেজিস্টার সংরক্ষণ করা হয় না। তাই ২০১৩ সালে ওয়ারিশান সনদ দেওয়ার বিষয়টি যাচাই করার কোন প্রকার সুযোগ ছিল না। পরবর্তীতে তার অজ্ঞাতসারেই নাজমুল ইসলাম ও তার বোন কামরুন্নাহারের আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৯ সালে তাদের ওয়ারিশান সনদ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু এই সনদটি ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ও দ্বিতীয় বারে দেওয়া, সেহেতু আগেরটাই বলবত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর যদি কেউ ভুল তথ্যের ওয়ারিশ নিয়ে জমি খারিজ করেই থাকে, তা যথাযথ কতৃপক্ষের কাছে আবেদরনের প্রেক্ষিতে বাতিল হতে পারে। অতএব এখানে আমাকে সহযোগী আসামী করে মামলা করার কোন কারন খোঁজে পাচ্ছিনা। তবে আমাকে সামাজিক ভাবে হেয় করার জন্য কোন চক্রান্ত থাকতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।