বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
রফিকুল ইসলাম আধার’র ২টি কাব্যগ্রন্থ পাওয়া যচ্ছে একুশে বই মেলায় বন্যার ক্ষতি পোষাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন নকলার কৃষক শেরপুরে ছাত্রশিবিরের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন নকলায় ভিডব্লিউবি উপকারভোগীর মাঝে সঞ্চয়ের টাকা প্রদান নকলায় ৫৩তম শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরণ শেরপুরের ৩টি সংসদীয় আসনের জন্য জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা নকলায় শতভাগ উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্দীপণা পুরষ্কার প্রদান নকলায় গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২, আহত ৪ নকলায় নেতৃবৃন্দের খোঁজখবর নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফাহিম চৌধুরী নকলার চরঅষ্টধর ইউনিয়ন যুব অধিকার পরিষদ’র সভাপতি রনি, সম্পাদক সুজন

জিনের বাদশাহর প্রতারনায় সর্বস্বান্ত নকলার দরিদ্র হবিরন

এম.এম হোসাইন, নিজস্ব প্রতিনিধি:
  • প্রকাশের সময় | রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৬৯০ বার পঠিত

গভীর রাতে গ্রামের নিরিহ মানুষকে ফোন দিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে নিজেকে জিনের বাদশাহ পরিচয় দিয়ে গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে অথবা পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে বিশেষ কায়দায় প্রতারনা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খবর প্রায়ই শুনা যায়।

কথিত জিনের বাদশার প্রতারনার জালে পড়ে জীবনের সব সঞ্চয় ও ছেলের আয়ের সব টাকাপয়সা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বানেশ্বরদী গ্রামের হবিরন বেগম (৫০) নামে এক নারী।

প্রতারনার স্বীকার অসহায় হবিরন বেগম জানান, ১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে তার নিজস্ব মোবাইলে একটি ফোনেকল আসে। অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি নিজেকে জিনের বাদশাহ (কোন এক মসজিদের বড় হুজুর) পরিচয় দিয়ে পরিবারের খোঁজখবর নেন। কথিত জিনের বাদশাহ হবিরনকে বলেন, ‘আপনি ভাগ্যবতী’, তবে আপনার ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের অনেকের বড় ফাঁড়া বা বিপদ আছে। এই ফাঁড়া কাটাতে হলে জিনের মাধ্যমে সামান্য কিছু টাকার একটি চালান দিতে হবে। এ টাকায় জিনের মাধ্যমেই মসজিদের ইমামের জন্য একটি জায়নামাজ কিনা হবে। এতে আপাতত ৭০০ টাকা লাগবে। এই টাকাগুলো না দিলে পরিবারের সদস্যরা বড় ধরনের বিপদের সম্মুখিন হবেন, এমকি মারাও যেতে পারে। মোবাইলে এমন ভয়ভীতি দেখালে হবিরন বেগম জিনের বাদশার বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রতারকের দেওয়া একটি বিকাশ নাম্বারে পরিবারের সবার অজান্তে ৭০০ টাকা পাঠান।

এর পর থেকে ওই প্রতারক জিনের বাদশাহ প্রতি গভীর রাতে ফোন দিয়ে হবিরনের পরিবারের খোঁজ খবরনেন এবং তার কথামত চলতে নির্দেশদেন। একপর্যায়ে জিনের বাদশা হবিরনকে বলে যে, তার কথা মতো না চললে তার ছেলেসহ পরিবারের সদস্যরা বড় ধরনের বিপদে পড়বেন এবং কেউ কেউ মারা যাবেন। এমন কথাবার্তা শুনে হবিরন বেগম ভয় পেয়ে যায়। সে আবেগের বশে জিনের বাদশার কথা অনুযায়ী কাউকে না জানিয়ে কষ্টার্জিত জমানো অর্থসহ তার ছেলের আয়ের টাকা ও ধারদেনা করে কথিত জিনের বাদশাহর দেওয়া বিকাশ নম্বরে চার ধাপে মোট ৮০,৭০০ হাজার টাকা পাঠিয়ে হবিরন বেগম আজ সর্বস্বান্ত হয়ে মানুষের ধারে ধারে ঘুরছেন।

দিশেহারা হবিরন বেগম জানান, সে এবিষয়ে নকলা থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। এছাড়া সিআইডি ও র‌্যাবসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করতে লিখিত অভিযোগ প্রস্তুত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

ভুক্তভোগী ওই নারীর ছেলে সাদ্দাম হোসেন জানান, বহু কষ্টে জমানো টাকা খুইয়ে মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি জানান, প্রতারকের অবস্থান খোঁজে বেড় করতে মোবাইল ট্রেকিং এর জন্য সংশ্লিষ্ঠ এক কর্মকর্তাকে ট্রেকিং খরচা বাবদ প্রয়োজনীয় খরচাপাতি দিয়েছেন। তার বিশ্বাস তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ বিভাগ প্রতারক চক্রকে খোঁজে বেড় করতে পারবেন।

স্থানীয় শিক্ষার্থী কবির হোসেন তাজেল বলেন, হবিরন বেগম এলাকার অসহায়দের মধ্যে একজন। এমতাবস্থায় কথিত জিনের বাদশাহ পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিকাশ নম্বর ব্যবহার করে হাতিয়ে নেওয়া টাকা উদ্ধার করতে প্রতারক চক্রকে চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ঠ আইন শৃঙ্খলা বিভাগের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

প্রতারনার ফাঁদে পড়া আরেক ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বানেশ্বরদী খন্দকার পাড়া এলাকার আসাদুজ্জামান জানান, মাত্র কয়েক মাস আগে তার স্ত্রীর কাছেও একই কায়দায় ৭৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক চক্র। তিনি বলেন, আমরা অল্প আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ ও অশিক্ষিত। তাদের অশিক্ষার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতারকরা নারীদের গুপ্তধন পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে অথবা পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে বিশেষ কায়দায় প্রতারনা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে তিনি জানান।

এলাকার গন্যমান্যদের একজন বানেশ্বরদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাফিজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও মানুষ এভাবে প্রতারকের খপ্পরে পড়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন। তিনি জাননা, কোন এক তথ্যে তিনি জেনেছেন, পুলিশের হিসাবে এমন শতাধিক চক্র আছে সারা দেশে। দেশের বিভিন্ন থানায় প্রতারণার ঘটনায় হওয়া মামলার এমন অর্ধশতাধিক ঘটনার তদন্তভার পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত তিন বছরে তারা এসব ঘটনায় জড়িত অন্তত ৫০ প্রতারককে গ্রেফতার করেছে বলে তিনি জানান। এমনকি গ্রেফতারকৃত ২০ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও নাকি দিয়েছেন বলে তিনি জানান। অতএব পুলিশ বা সিআইডি বিভাগ এই প্রতারক চক্রকে চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনতে পারবেন বলে মাফিজুল ইসলামসহ অনেকের দৃঢ় বিশ্বাস।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ

এই জাতীয় আরো সংবাদ
©২০২০ সর্বস্তত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত | সমকালীন বাংলা
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102
error: ভাই, খবর কপি না করে, নিজে লিখতে অভ্যাস করুন।