চলমান লকডাউনে কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যেই সরকার পোশাক শিল্প খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামীকাল রোববার (পহেলা আগস্ট) থেকে শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দেওয়ায় উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম পোশাক শিল্পের চাকরিটি বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ব্যয়বহুল ও ঝুঁকির যাত্রায় মেতে ওঠেছেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাজারো পোশাক শ্রমিক।
যদিও পোশাক শিল্পের মালিকদের সাথে কথা বলেই হয়তোবা সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে, লকডাউন চলাকালে দূরের যে বা যারা গণপরিবহণ চলাচলে বিধি-নিষেধের কারনে কর্মস্থলে যোগদান করতে পারবেন না, তাদের চাকরি যাবে না। বরং লকডাউন শেষে পোশাক শ্রমিকরা নিজ নিজ কর্মস্থলে গিয়ে চাকরিতে যোগদান করতে পাবেন। কিন্তু শ্রমিকরা চাকরি হারানোর শঙ্কা নিয়ে জানান, গর্মেন্টেসের মালিকরা এমন কথা বলেই থাকেন।
অনেক পোশাক শ্রমিক বলেন, যথা সময়ে অফিসে হাজির হতে না পারলে মালিকরা বিভিন্ন অজুহাতে বা নানান দোষ দেখিয়ে আমাদের চাকরি থেকে ছাটাই করে দিবেন। তখন আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষদের কেউ খোঁজ খবর নিবেন না। তাই বাধ্য হয়েই রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে পণ্যবাহী ট্রাক ও মিনি ট্রাকে গাদাগাদি করে জীবনের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। শত কষ্ট হলেও রবিবার সকালের মধ্যে ঢাকাতে পৌঁছাতে হবেই। নতুবা তাদের চাকরি হারানোর শতভাগ আশঙ্কা রয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক পোশাক শ্রমিকরা জানান।
এদিকে, চলমান লকডাউনে গণপরিবহন চলাচলে বিধি-নিষেধ থাকায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ভেঙে ভেঙে হলেও ঢাকার কর্মস্থলে পৌঁছাতে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের ভিড় জমেছে। এতে যাত্রীদের মধ্যে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্বতো দূরের কথা, কোন প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নজরে পড়েনি।
মিনি ট্রাকে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া পোশাক শ্রমিক আকবর আলী, আকলিমা খাতুন, সোলায়মান, রেখা বেগম ও ইব্রাহীমসহ অনেকে বলেন, কোরবানির ঈদে বাড়ি এসেছিলাম, আগামীকাল রবিবার আমাদের অফিস খুলবে। কিন্তু যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে ট্রাকে করে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। যেভাবেই হোক রবিবার সকাল ৯টার মধ্যে অফিসে পৌঁছাতে হবে; তা-না হলে চাকরি চলে যাবে। এসুযোগে ট্রাক মালিক ও ড্রাইভাররা এক প্রকার চাপে ফেলে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছেন। চাকরি হারানোর ভয়ে ভাড়ার কথা না ভেবে বেশি ভাড়া দিয়েই নিম্ন আয়ের মানুষরা ঢাকায় ফিরছেন। এতে করে একদিকে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হচ্ছে, অন্যদিকে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমান জানান, লকডাউন চলাকালে দূরের যে বা যারা গণপরিবহণ সমস্যার কারনে কর্মস্থলে যোগদান করতে পারবেন না, তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে স্ব-পদেই চাকরি বলবৎ থাকবে। লকডাউন শেষে নিজ নিজ কর্মস্থলে গিয়ে তারা চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন। এই বিষয়টি প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে সকলকে জানানো হচ্ছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে পোশাক শ্রমিকরা তা মানতে নারাজ। উপজেলার বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে বলে তিনি জানান।