আর মাত্র কয়েকদিন পরেই মুসলিম জাহানের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র ঈদ-উল-আজহা তথা কোরবানির ঈদ। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যে বা যারা কোরবানি দিবেন, তাদের অধিকাংশরাই কোরবানির পশু কিনতে পশুর হাটের ওপর নির্ভশীল। এরই মধ্যে কেউ কেউ কোরবানির পশু কিনে নিয়েছেন।
তবে পছন্দ ও দামের মিল না হওয়ায় এবং কোরবানির জন্য নিরোগ পশু কিনতে অনেকে এক হাট থেকে অন্য হাটে ছুটছেন। শেরপুর জেলার সদর উপজেলাসহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় এর ব্যতিক্রম হচ্ছেনা।
দেশে যখন করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রভাব বেড়েছে, তখন শেরপুর জেলার প্রতিটি উপজেলার কোরবানির পশুর হাটে মনিটরিং ও পরামর্শ প্রদানসহ পশুর চিকিৎসা শেষে পশু সুস্থ্যতার প্রমান প্রদানে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২১ টি স্থায়ী ও ৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৬টি স্থায়ী, শ্রীবরদী উপজেলায় ৪টি স্থায়ী ও ২ টি অস্থায়ী, নালিতাবাড়ী উপজেলায় ৫টি স্থায়ী, নকলা উপজেলায় ৩টি স্থায়ী ও একটি অস্থায়ী এবং ঝিনাইগাতী উপজেলায় ৩টি স্থায়ী পশুর হাটে বেশ বেচা-কেনা হচ্ছে। কোরবানির পশুর হাটে মনিটরিং ও পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি পশু সুস্থ্যতার প্রমান প্রদানে প্রতিটি উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের ব্যবস্থাপনায় আলাদা আলাদা মেডিকেল টিম করোনা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলছেন।
যদিও করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতির কারনে অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি কম দেখা যাচ্ছে। অন্যান্য বছর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে গরু ব্যবসায়ীরা এসে শেরপুরের বিভিন্ন উপজেলার পশুর হাট থেকে কোরবানির পশু কিনে নিয়ে যেতেন। এবার জেলার বাহির থেকে পশু ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা একেবারেই কম আসছেন। ফলে প্রতিটি পশুর হাটে বাহিরের বড় বড় ক্রেতা ও ব্যবসায়ীর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তাই ঈদের হাটে গরু বিক্রির আশায় বসে থাকা খামারি ও গরু ব্যবসায়ীরা বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন।
খামারিরা জানান, কোরবানির হাটে ভালো দাম পাওয়ার আশায় তারা ঈদের আগের কয়েক মাস গরু-ছাগলের বাড়তি পরিচর্যা করেন। কিন্তু ক্রেতা কম থাকায় ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। অনেকে তাদের পশু কম দামে বিক্রি করায় পুঁজির টাকা নিয়ে শঙ্কায় আছেন বলেও অনেকে জানান। তারা আরও জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার সারা দেশের ন্যায় শেরপুরের প্রতিটি কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে। খামারি ও ক্রেতাসাধারণকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের জেলা-উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ও সংশ্লিষ্টরা কোরবানির পশু অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য বরাবর নির্দেশক্রমে অনুরোধ করে আসছেন বলেও খামারিরা জানান।
প্রতিটি পশুর হাটের ইজারাদাররা জানান, হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে তাঁরা সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক জানা যায়, করোনা মহামারির কারণে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে অস্থায়ী হাটের ইজারাদারদের বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। এসব শর্ত ভঙ্গ করলে ইজারাদারদের ইজারা প্রয়োজনে বাতিল করা হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
শেরপুর সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি দত্ত, নকলা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুুল আহাদ, শ্রীবরদী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওমর ফারুক, নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মতিউর রহমান ও ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাদিয়া আফরিনসহ অনেকে জানান, প্রান্তিক কৃষক ও খামারিদের কথা বিবেচনায় এনে ১৭ জুলাই শনিবার থেকে বিশেষ ক্যাটেল ট্রেন চালু করা হয়েছে। এ ট্রেনের বিষয়ে প্রচার-প্রচারনাসহ মোবাইলের মাধ্যমে এ ট্রেনে পশু পরিবহনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, পাশাপাশি করোনার বিষয়ে সকলকে সচেতন করা হচ্ছে বলেও তাঁরা জানান।
শেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার (ডিএলও) ডা. মো. আবদুল হাই জানান, শেরপুর জেলাতে হৃষ্টপুষ্টকরণ খামারি ও পশু পালনকারী আছে কম-বেশি ১৩ হাজার ৬০৬ জন; কোরবানির জন্য তাদের পালিত হৃষ্টপুষ্টকরণ পশু আছে ৪৪ হাজার ৯৬৬টি (কমবেশি হতে পারে)। এসকল প্রান্তিক খামারি, পশু পালনকারী কৃষক ও পশু ব্যবসায়ীদের কথা বিশেষ বিবেচনা করে জেলা-উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে অনলাইন কোরবানির পশুর হাট চালু করা হয়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের এই হাটে ঘরে বসেই কোরবানীর পশু বেচা-কেনা করতে পেরে লাভবান হচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
করোনা সংক্রমণ রোধে আসন্ন ঈদ-উল-আজহায় কোরবানির পশুর হাট শারীরিক উপস্থিতিতে না করে অনলাইনে পশু বেচা-কেনা করতে পারলে অধিকতর ভালো হবে বলে মনে করছেন সুশীলজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগন।