করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় পশু খামারী, পশু পালনকারী ও পশু ব্যবসায়ীরা তাদের পশু বিক্রি ও ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে বেশে চিন্তিত ছিলেন। প্রান্তিক খামারী, পশু পালনকারী কৃষক ও পশু ব্যবসায়ীদের কথা বিশেষ বিবেচনায় এনে কোরবানীর পশু পরিবহনের জন্য বিশেষ ক্যাটেল ট্রেন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
এই ট্রেনটি দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন হতে ইসলামপুর-জামালপুর-ময়মনসিংহ হয়ে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছাবে। এতে করে শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলা-উপজেলার খামারী, পশু পালনকারী ও পশু ব্যবসায়ীরা এই বিশেষ ক্যাটেল রেলের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
এই বিশেষ ক্যাটেল ট্রেনের সুবিধা ভোগের জন্য শেরপুর ও জামালপুরের খামারী, পশু পালনকারী কৃষক ও পশু ব্যবসায়ীদের জামালপুর স্টেশনে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তাছাড়া ময়মনসিংহের ও জামালপুরসহ পার্শবর্তী টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ অন্যান্য জেলা-উপজেলার খামারী, পশু পালনকারী ও পশু ব্যবসায়ীরা চাইলে নিকটস্থ রেল স্টেশনে যোগাযাগ করে তাদের বিক্রি যোগ্য কোরবানীর পশু এবিশেষ ক্যাটেল ট্রেনের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকায় নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এই বিশেষ ট্রেন সার্ভিস ১৭ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত চলমান থাকবে। ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন হতে সাড়ে ৩টার সময় ছেড়ে যাবে ও পৌঁছাবে ৮ টা ১০ মিনিটের সময়। অন্যদিকে ঢাকা থেকে সাড়ে ১১ টার সময় দেওয়ানগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে।
শেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার (ডিএলও) ডা. মো. আবদুল হাই জানান, শুধুমাত্র ছোট একটি শেরপুর জেলাতেই হৃষ্টপুষ্টকরণ খামারী ও পশু পালনকারী আছে ১৩ হাজার ৬০৬ জন; এবং কোরবানীর জন্য তাদের পালিত হৃষ্টপুষ্টকরণ পশু আছে ৪৪ হাজার ৯৬৬টি (কমবেশি হতে পারে)। এসকল প্রান্তিক খামারী, পশু পালনকারী কৃষক ও পশু ব্যবসায়ীদের কথা বিশেষ বিবেচনা করে জেলা-উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ ক্যাটেল ট্রেনের বিষয়ে প্রচার-প্রচারনাসহ মোবাইলের মাধ্যমে তাদেরকে এ ট্রেনে পশু পরিবহনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, করা হচ্ছে সচেতন। তিনি আরও জানান, করোনা ভাইরাস হতে সৃষ্ট দুর্যোগকালে জনসাধারণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বেশ কয়েকদিন আগেই শুরু করা হয়েছে অনলাইন কোরবানীর পশুর হাট। ভার্চুয়াল এই হাটে ঘরে বসেই কোরবানীর পশু বেচা-কেনা করতে পেরে লাভবান হচ্ছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
শেরপুর সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি দত্ত, নকলা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুুল আহাদ, শ্রীবরদী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওমর ফারুক, নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মতিউর রহমান ও ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাদিয়া আফরিনসহ অনেকে জানান, এরইমধ্যে বিশেষ ক্যাটেল ট্রেনের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকায় পশু নেওয়ার বিষয়টি অধিকাংশ খামারী, পশু পালনকারী ও পশু ব্যবসায়ীরা জেনে গেছেন। শেরপুর ও জামালপুরের খামারী, পশু পালনকারী কৃষক ও পশু ব্যবসায়ীরা এই সুসংবাদ পেয়ে বেশ খুশি হয়েছেন। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা আরও জানান, যে বা যারা তাদের পশু ঢাকায় নিতে আগ্রহী নয়, তাদের জন্য জেলার প্রতিটি (৫টি) উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে একটি করে ফেইসবুক পেইজ খোলা হয়েছে। উপজেলার সকল পশু খামারী, পশু ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য পরিবারের লোকদের নিয়ে চালু করা হয়েছে ফেইসবুক গ্রুপ। এসব পেইজ ও গ্রুপে খামারীরা ও পশু পালনকারীরা তাদের বিক্রি উপযোগী অগণিত পশুর ছবিসহ প্রয়োজনীয় বিস্তারিত তথ্য নিয়মিত আপলোড করছেন। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই সময় ও শ্রম বাঁচছে। এতেকরে ক্রেতারা দিনের পর দিন বিভিন্ন বাজার না ঘুরে হাতের মুঠোতে থাকা এনড্রয়েট মোবাইলের মাধ্যমে কয়েক মিনিটের মধ্যে হাজার হাজার পশু দেখে কিনতে পারছেন।
করোনা কালীন সময়ে এ বিশেষ ক্যাটেল ট্রেন সার্ভিস চালু হওয়ায় প্রান্তিক পশু খামারী, পশু পালনকারী ও পশু ব্যবসায়ীরা বেশ উপকৃত ও লাভবান হবেন বলে মনে করছেন প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা, সুশীলজন, পশু খামারী, পশু পালনকারী ও পশু ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে অনলাইন পশুর হাটের প্রতি ঝুঁকছেন বেশি, উপকৃতও হচ্ছেন খামারী, কোরবানী পশু পালনকারী ও ক্রেতারা; এমনটাই জানান জেলা-উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ও অগণিত সুবিধাভোগীরা।