মুসলিম জাহানের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। পবিত্র ঈদ-উল-আযহা পালিত হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। কিন্তু বিশ্বব্যাপী এই বৃহৎ অনুষ্ঠানকে কিছুটা হলেও নিরানন্দে পরিণত করতে চলছে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯)।
করোনা ভাইরাস হতে সৃষ্ট দুর্যোগকালে জনসাধারণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে শেরপুর জেলায় শুরু করা হয়েছে অনলাইন কোরবানীর পশুর হাট। ভার্চুয়াল এই হাটে ঘরে বসেই কোরবানীর পশু বেচা-কেনা করতে পেরে লাভবান হচ্ছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
এরইমধ্যে এই হাটটি শেরপুরবাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জেলার প্রতিটি (৫টি) উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে একটি করে ফেইসবুক পেইজ খোলা হয়েছে। উপজেলার সকল পশু খামারী ও ধনাঢ্য পরিবারের লোকদের নিয়ে চালু করা হয়েছে ফেইসবুক গ্রুপ। এসব পেইজ ও গ্রুপে খামারীরা তাদের খামারের কোরবানী ও বিক্রি উপযোগী অগণিত পশুর ছবিসহ প্রয়োজনীয় বিস্তারিত তথ্য নিয়মিত আপলোড করছেন। এতে কামারীদের সময় ও শ্রম বাঁচছে, তাছাড়া ক্রেতারাও দিনের পর দিন বিভিন্ন বাজার না ঘুরে হাতের মুঠোতে থাকা এনড্রয়েট মোবাইলের মাধ্যমে কয়েক মিনিটের মধ্যে হাজার হাজার পশু দেখে কিনতে পারছেন।
অনলাইন কোরবানীর পশুর হাটে পশু বেচা-কেনা করতে পারায় একদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমছে, অন্যদিকে ক্রেতা-বিক্রেতার সময় বাঁচছে। ফলে দিন দিন অনলাইন কোরবানীর হাটের কদর বাড়ছে, এ হাটের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন গবাদী পশুর খামারী ও কোরবানী দাতারা। প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ও খামারীগন একের পর এক কোরবানী যোগ্য গবাদী পশুর ছবি আপলোড করছেন। ছবির সাথে খামারীর নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, পশুর আনুমানিক ওজন ও সম্ভাব্য দামসহ প্রয়োজনীয় বিস্তারিত তথ্যাবলী দেয়া হচ্ছে। ফলে যে কেউ খুব সহজেই তার চাহিদা অনুযায়ী পশু দেখতে পারছেন। পরে আলোচনা সাপেক্ষে বেচা-কেনা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের সহযোগিতায় চালু হওয়া এই অনলাইন পশুর হাটে প্রদর্শিত প্রতিটি পশু সংশ্লিষ্ট উপজেলার প্রাণী সম্পদ দপ্তর কর্তৃক পরীক্ষিত। ফলে এইসব পশুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। ক্রেতা ও বিক্রেতারা নিজেদের সচেতনতার পরিচয় দিয়ে জনসমাগম এড়িয়ে এ অনলাইন হাট থেকে বড় ৪১ টি গরু ক্রয়-বিক্রয় করেছেন।
যে বা যারা অনলাইন পশুর হাট থেকে কোরবানীর পশু কিনেছেন, তাদের দেখাদেখি অনেকে আগ্রহী হয়েছেন। কেউ কেউ অর্ডার করেছেন, আবার কেউ অনলাইনে দামাদামী করছেন। বাজারে না গিয়ে ভিডিও কলের মাধ্যমে গরু দেখে পছন্দ করতে পারছেন ক্রেতারা। এই সুযোগ শুধু উপজেলা, জেলা ও দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বিদেশে থেকেও অনেক প্রবাসী অনলাইনে পশু দেখে চাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে সরাসরি খামারের পশু দেখে আলোচনার মাধ্যমে পছন্দের পরে দরদাম করে কিনতে পারছেন। তবে পশু হাতে পাওয়ার আগে আর্থিক লেনদেন না করার জন্য প্রাণি সম্পদ দপ্তর থেকে বারবার ক্রেতাদের সতর্ক করা হচ্ছে। তাছাড়া কেউ চাইলে আপলোড করা খামারীর মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে সরাসরি সশরীরে গিয়ে দেখেশুনে বুঝে পশু ক্রয় করতে পারছেন।
শেরপুর সদরসহ উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে কর্মরত ভেটেরেনারী সার্জন (ভিএস), উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাবৃন্দ, ভিএফএ ও অন্যন্যরা সকল খামারী ও ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
নকলা পৌরসভার কায়দা এলাকার খামারী পারভেজ মোশাররফ হোসেন জানান, তিনি এই অনলাইন পশুর হাটের মাধ্যমে ও তার নিজস্ব ফেইজবুক পেইজের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি দেশী বেদেশি ষাড় বিক্রি করেছেন। এতে করে তার সময়, শ্রম ও বাজারের ইজারাদারের অর্থ বেঁচে গেছে। বিশেষ করে অনলাইন বাজারের বদৌলতে তাকে বাজারে যতে হয়নি, ফলে হয়তোবা সে ও তার পরিবারের সদস্যরা চলমান করোনা ভাইরাস থেকে আজও সুরক্ষিত আছেন।
শেরপুর সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি দত্ত, নকলা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুুল আহাদ, শ্রীবরদী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওমর ফারুক, নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মতিউর রহমান ও ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাদিয়া আফরিন জানান, খামারীসহ যেকেউ চাইলে কোরবানী যোগ্য পশু বিক্রির জন্য অনলাইন পশুর হাটের পেইজে ও গ্রুপে বিজ্ঞাপন আকারে প্রচার-প্রচারনা দিতে পারেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার (ডিএলও) ডা. মো. আবদুল হাই জানান, অনলাইন পশুর হাটের প্রতিটি পশুর সুস্থতার বিষয়ে শতভাগ ভরসা রাখা যায়, কারন প্রতিটি পশু সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে যথাযথ ভাবে পরীক্ষিত। অনলাইন পশুর হাট থেকে কোরবানীর পশু কিনলে সময়, শ্রম ও অর্থ বাঁচে; কিন্তু মিলে নিরোগ পশু। তাই এই বাজার থেকে কোরবানীর পশু কিনলে কেউ ঠকবেন না বলে মনে করছেন সুশীলজন।