বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে শেরপুর জেলায় শুরু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রদর্শনী। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার জেলার নকলা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিবিদ্যা নিকেতনে সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলে।
প্রদর্শনী চলাকালে এসএমসি সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল মনসুর, প্রধান শিক্ষক ফকির মোহাম্মদ রেজাউল করিম, সহকারী প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ সুলতান মাহমুদ ও সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ খুরশেদ করিম শ্যামলসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা কফিল উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিজ উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা তায়াবালী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেন চন্দ্র, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কুমেত চন্দ্র বিশ্বাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুকুমার; শিক্ষক-সাংবাদিক মো. মোশারফ হোসাইন, নকলা ইয়্যুথ রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি মো. নূর হোসেন, শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-আমিন, বিডিক্লিন নকলা টিমের সদস্য মো. সাব্বির আহম্মেদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর দেড়টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, বিশাল এক বাসের মধ্যে সাজানো ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ওঠতেছে এবং দেখা শেষ করে অন্যদিক দিয়ে নেমে আসছেন। ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মাধ্যমে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ নতুন প্রজনন্মের তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একদিক দিয়ে বাসে সাজানো ওঠছে এবং সত্যিকারের ইতিহাস জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তাদের।
নকলায় অবস্থান করা ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রোগ্রাম অফিসার কে.এম নাসির উদ্দিন জানান, বেশ কয়েকদিন শেরপুর জেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর প্রদর্শন করা হবে। তাছাড়া ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সালের বিজয় দিবস ও তৎপরবর্তী সময়কাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাবলির ওপর প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হচ্ছে। এমনকি মানবাধিকার ও শান্তি সম্পর্কিত বেশ কিছু লিফলেট ও স্থির চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সবার মাঝে জাগরুক রাখতে এই কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্য দুই কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন ও হাকিমুল ইসলাম জানান, ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন দলিল ও স্মারক রয়েছে, যা দেখে বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে স্বচ্ছ একটি ধারণা পাবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর দেখার পর শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা বাড়িতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, এমন কারও কাছ থেকে ঘটনাবলি শুনে নির্দিষ্ট শব্দে রচনা লিখবে। পরে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভালো লেখার দিয়ে বই আকারে প্রকাশ করা হবে এবং নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের লেখার জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক ফকির মোহাম্মদ রেজাউল করিম, সহকারী প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ সুলতান মাহমুদ ও সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ খুরশেদ করিম শ্যামলসহ অনেকে জানান, ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠারে শিক্ষার্থীসহ নতুন প্রজন্মের তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সত্যিকারের ইতিহাস জানার সুযোগ পাচ্ছে। এতেকরে আগামীতে কেউ বাংলার ইতিহাস বিকৃতি করার সুযোগ পাবেন না।
বিদ্যালয়টির পরিচালনা পরিষদের (এসএমসি) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল মনসুরের বলেন, ‘আমরা যুদ্ধকালীন সময়ে যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমরাও এতোদিন অনেক কিছু জানার সুযোগ পাইনি। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মাধ্যমে আমরা দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অনেক কিছুই জানতে পারলাম।’
ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রদর্শনী শেষে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরে হাতে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত অ্যালবাম প্রদান করা হয়।