বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক, গবেষক, কলাম লেখক, বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সৈয়দ আবুল মকসুদ ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে নানা গবেষণাধর্মী বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে বাঙালি জাতি সাহিত্য জগতের আরও একটি নক্ষত্র হারালো।
সৈয়দ আবুল মকসুদের ছেলে সৈয়দ নাসিফ মকসুদ বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। সৈয়দ নাসিফ মকসুদ বলেন, আমার বাবা সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দ আবুল মকসুদের বাবার নাম সৈয়দ আবুল মাহমুদ ও মায়ের নাম সালেহা বেগম।
বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ অনেক প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি কাব্যচর্চাতেও তাঁর খ্যাতি ছিলো দেশব্যাপী। তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা চল্লিশের ওপর।
বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ঋষিজ পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৪ সালে এম আনিসুজ্জামান সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। এটি ছিল পাকিস্তান সোশ্যালিস্ট পার্টির মুখপত্র। পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সমর্থিত সাপ্তাহিক ‘জনতা’য় কাজ করেন কিছুদিন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বার্তা সংস্থায় যোগ দেন। ২০০৮ সালের ২ মার্চ বার্তা সংস্থার সম্পাদকীয় বিভাগের চাকরি ছেড়েদেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহিত্যিক হিসেবেও খ্যাতিমান ছিলেন। ১৯৮১ সালে তার কবিতার বই বিকেলবেলা প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ দারা শিকোহ ও অন্যান্য কবিতা প্রকাশিত হয়। মানবাধিকার, পরিবেশ, সমাজ ও প্রেম নিয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন।
আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে তিনি লিখেছেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর জীবন, কর্মকাণ্ড, রাজনীতি ও দর্শন (১৯৮৬) ও ভাসানী কাহিনী (২০১৩)। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে নিয়ে লিখেছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য (২০১১) ও স্মৃতিতে ওয়ালীউল্লাহ (২০১৪)।
সৈয়দ আবুল মকসুদ একজন সাবলীল, বিশ্লেষণধর্র্মী ও কথনের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রথিতযশা এ কলাম লেখকের মৃত্যুতে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও সাহিত্য জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল বলে অনেকে মনে করছেন।