বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর আওতায় শেরপুর জেলার নকলা জোনে চলতি মৌসুমে রোপনকৃত আলুর ফলন দেখে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। বিএডিসি আলুর বিভিন্ন ব্লক পরিদর্শন করে ও ফলন দেখে লক্ষমাত্রার চেয়ে অর্জন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বলে জানিয়েছেন বিএডিসি-তে কর্মরত উর্ধ্বতন অফিসারগন। বিএডিসি’র কর্মকর্তারা আশা করছেন এবার নকলা জোনে আলু উৎপাদনে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ হবে।
গুনগত মানসম্পন্ন বীজআলু উৎপাদনের লক্ষে বিএডিসি আলুর বিভিন্ন ব্লক পরিদর্শনে গিয়ে চাষীদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিএডিসি’র উর্ধ্বতন অফিসারসহ জেলা ও উপজেলা অফিসে কর্মরত বিএডিসি’র কর্মকর্তাগন। এর অংশ হিসেবে ৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিএডিসি ঢাকার উপপরিচালক (মান নিয়ন্ত্রণ) কৃষিবিদ এএসএম খায়রুল হাসান শামীম চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বীজআলু উৎপাদনের বিভিন্ন ব্লক পরিদর্শন করেন। এর আগে প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবীর হোসেন, বিএডিসি ঢাকার যুগ্ম পরিচালক কৃষিবিদ মো. রুহুল আমিন, শেরপুর জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ ছালমা আক্তার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কইন্সটিটিউট জামালপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমানসহ অনেকে নকলা জোনের বিভিন্ন ব্লক পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ কারেন এবং গুনগত মানসম্পন্ন বীজআলু উৎপাদনের লক্ষে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন তাঁরা। বিএডিসি বীজ আলুর মাঠ পরিদর্শনকালে তাদের সাথে ছিলেন- বিএডিসি হিমাগারের উপপরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম, উপসহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমানসহ বিভিন্ন ব্লকের আলুচাষীরা।
উপপরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৯ টি ব্লকে চুক্তিবদ্ধ ৩৬ কৃষকসহ অর্ধশতাধিক আলু চাষীকে নির্বাচন করে বীজআলু উৎপাদনের লক্ষে ২৭০ একর জমিতে এবং রপ্তানি করার লক্ষে আরও ৩০ একর জমিতে বিএডিসি’র আওতায় আলু চাষ করা হয়েছে। এসকল জমিতে প্রতি একরে এক মেট্রিকটন হারে মোট ৩০০ মেট্রিকটন বিএডিসির বীজ রোপন করা হয়। ২৭০ একর জমিতে বীজ আলু উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো প্রতি একরে ৫.৬৭ মেট্রিকটন হারে ১,৫৩২ মেট্রিকটন এবং ৩০ একর জমি থেকে রপ্তানির জন্য উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০ মেট্রিকটন আলু। তবে আবহাওয়া আলু চাষের পুরোপুরি অনুকূলে থাকায় বীজ আলু উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে ১,৬২৩ মেট্রিকটন থেকে ১৬২৭ মেট্রিকটন অর্জন হবে বলে আশাব্যক্ত করেন বিএডিসি ঢাকার উপপরিচালক (মান নিয়ন্ত্রণ) কৃষিবিদ এএসএম খায়রুল হাসান শামীম ও বিএডিসি হিমাগারের উপপরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলামসহ বিএডিসির নকলা জোনে কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তাগন।
নকলা জোনের আওতায় মান সম্পন্ন বীজ আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় চুক্তিবদ্ধ আলু চাষীদের ২দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ওই প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কৃষকরা আলু চাষ ও সেবা-যত্ন করায় এবার আলুর উৎপাদন বেড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তাছাড়া প্রকল্প পরিচালক, ঢাকার উপপরিচালক (মান নিয়ন্ত্রণ) ও যুগ্ম পরিচালক, জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কইন্সটিটিউট জামালপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ অনেক উর্ধ্বতন কৃষিবিদগন দফায় দফায় বিএডিসি আলুর বিভিন্ন ব্লক পরিদর্শন করে কৃষকদের সময়োপযোগী পরামর্শ প্রদানে উৎপাদন বেড়েছে বলে অনেকের ধারনা। নকলা জোনে আলু উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিএডিসি হিমাগারের উপপরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম, উপসহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমানের নিয়মিত আলুর ব্লক পরিদর্শন ও কৃষকদের পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে জানান স্থানীয় আলু চাষীরা।
উপপরিচালক (টিসি) কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, তাদের দুই জনের সংকলণে ও নিজস্ব অর্থায়নে মুদ্রিত প্রশিক্ষাণার্থী ম্যানুয়াল বিএডিসির চুক্তিবন্ধ আলু চাষীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালটি অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (সিডিপি ক্রপস) বিএডিসি ঢাকা, প্রকল্প পরিচালক, যুগ্ম পরিচালক (মাননিয়ন্ত্রণ), উপপরিচালক (মাননিয়ন্ত্রণ) বিএডিসি ঢাকা মহোদয়ের বিশেষ অনুপ্রেরনায় এবং কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন বই, পত্রিকা, খ্যাতিমান বিভিন্ন কৃষিবিদ ও গবেষকগণের লেখাসহ বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে সংকলিত প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালটি কৃষকদের অধিক কাজে লেগেছে। এই প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল থেকে অর্জিত জ্ঞানকে কৃষকরা আগামী দিনগুলোতেও কাজে লাগিয়ে আলুসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত রাখবেন বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁরা আরও জানান, বিএডিসি’র আওতায় কৃষকের উৎপাদিত আলু গ্রেডিং করার পর সরকারের নির্ধারিত মূল্যে কিনে নিয়ে হিমাগারে সংরক্ষণ করা হবে। পরে হিমাগারে সংরক্ষিত ওই আলুবীজ সরকারের নির্ধারিত মূল্যে কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়। তাতে ভালোমানের আলুবীজ কিনা এবং তাদের উৎপাদিত আলু সরকারের কাছে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করায় বিএডিসির আলু চাষীরা দুই দিকেই লাভবান হবেন।