মিয়ানমারে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। একজন জেনারেলকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে। এর আগে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চি, দেশটির রাষ্ট্রপতি উইন মিনতসহ বেশকিছু শীর্ষ স্থানীয় নেতাকে আটক করে দেশটির সেনাবাহিনী। তাদের আটকের পর ওই দেশের রাজধানী নাইপিডো, প্রধান শহর ইয়ানগনসহ বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ শহর গুলোতেই সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে; পর্যায়ক্রমে সেনা টহলের পরিধি বাড়নো হচ্ছে। রাজধানীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। খবর: রয়টার্স ও বিবিসি’র বার্মিস সার্ভিস
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্র মায়ো নিউনত-এর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে সেনাবাহিনীর অভিযানে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চি, দেশটির রাষ্ট্রপতি উইন মিনতসহ বেশকিছু শীর্ষ স্থানীয় নেতাকে আটক করা হয়। মায়ো নিউনত জনগণকে উত্তেজিত না হয়ে আইন অনুসারে প্রতিক্রিয়া দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন বলেও রয়টার্সের প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে। বিবিসির বার্মিস সার্ভিস জানিয়েছে, দেশটির রাজধানী নাইপিডোতে স্থগিত করা হয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট অধিবেশন। বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে টেলিফোন এবং ইন্টারনেট লাইন। বন্ধ করা হয়েছে ওই দেশের টিভি চ্যানেল সম্প্রচার।
গত বছরের ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। তবে ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলে দেশটির সেনাবাহিনী। সেই অভিযোগেই অভিযান চালিয়ে সু চিসহ এনএলডির শীর্ষ নেতাদের আটক করা হল। ওই নির্বাচনে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের ভোটারদের ভোট বঞ্চিত করা হয়েছে বলে বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী থেকে সমালোচনা করা হয়। আর সেনাবাহিনী সমর্থিত বিরোধী জোট নির্বাচনে দাবি করে নির্বাচনে ৮.৬ মিলিয়ন ভোট জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।
ওই নির্বাচনে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বড় জয় পায়। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যেখানে ৩২২টি আসনই যথেষ্ট, সেখানে এনএলডি পেয়েছে ৩৪৬টি আসন। সেনাবাহিনী সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি তোলে। দাবি মানা না হলে সেনাবাহিনী ফের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেয় তারা। গত শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও মিয়ানমারে অবস্থিত পশ্চিমা দেশগুলোর দূতাবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে সেনা হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানায়। যদিও পরের দিনই দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে অভ্যুত্থানের আশঙ্কা নাকচ করে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সংবিধান মেনে আইন অনুযায়ী কাজ করবে। তাছাড়া গত সপ্তাহে সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, ‘নির্বাচনে প্রতারণার’ অভিযোগ নিয়ে মিয়ানমারে যে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান না হলে ‘ব্যবস্থা নেওয়ার’ পরিকল্পনা আছে তাদের। যদিও নির্বাচনের পর বেসামরিক সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যে সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে নতুন পার্লামেন্টের যাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পার্লামেন্ট অধিবেশন স্থগিতের আহ্বান জানানো হয়।