শেরপুর জেলার সদর উপজেলার বলাইরচর ইউনিয়নের জঙ্গলদী পশ্চিমপাড়া এলাকায় নিরাপদ সবজি উৎপাদন বিষয়ক উদ্ধুদ্ধকরণ সভায় কৃষকদের উৎপাদিত নিরাপদ শাক-সবজির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আলাদা বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। তাছাড়া কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপন্য পরিবহন ও বাজারজাত করণের সুবিধার্থে গ্রামীণ রাস্তাঘাটা সংস্কার ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবীও জানান কৃষক বক্তারা।
পরিবেশ সুরক্ষা এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির আয়োজনে এবং জেলা প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রণমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি) এর সহযোগিতায় উপজেলার বলাইরচর ইউনিয়নের জঙ্গলদী পশ্চিমপাড়া এলাকায় ২০ জানুয়ারি বুধবার দুপুরে নিরাপদ সবজি উৎপাদন বিষয়ক উদ্ধুদ্ধকরণ সভায় কৃষকরা এসব দাবী তুলে ধরেন।
জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত নিরাপদ সবজি উৎপাদন বিষয়ক উদ্ধুদ্ধকরণ এ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনার কলি মাহবুব ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শেরপুর খামার বাড়ীর উপপরিচালক (ডিডি) ড. মোহিত কুমার দে। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ ফিরোজ আল মামুন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শিব শংকর কারুয়া, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইয়াকুব আলী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শেরপুর খামারবাড়ীর উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারি ও মো. ফজলুর রহমান, জঙ্গলদী পশ্চিমপাড়া আইপিএম ক্লাব সভাপতি কৃষক দেলোয়ার হোসেন, কৃষানী ইশরাত জাহান ও শিক্ষক রফিকুল ইসলাম আকন্দ প্রমুখ।
অতিথি বক্তারা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে নিরাপদ শাক-সবজি আবাদ বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। ফসলে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার করার পরামর্শদেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করতে জৈব সারের কোন বিকল্প নেই বলে তাঁরা মন্তব্য করেন। তাঁরা জানান- আগে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফসলের উৎপাদন বাড়ানো ছিলো প্রধান লক্ষ্য, আর এখন নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। তবে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করে উৎপাদিত শাক-সবজির সাথে উৎপাদিত নিরাপদ শাক-সবজি একই বাজারে নিরাপদ বিক্রি হওয়ায় নিরাপদ শাক-সবজি উৎপাদনকারী কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। তাই নিরাপদ শাক-সবজির জন্য আলাদা বাজার বা বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপনের দাবী জানানোসহ রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও মেরামতের দাবী জানান স্থানীয় কৃষকরা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব তাঁর বক্তব্যে কৃষকদের দাবীগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে কৃষকদের আশ্বাস দেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের এবিষয়ে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শেরপুর খামার বাড়ীর উপপরিচালক (ডিডি) ড. মোহিত কুমার দে। তাছাড়া নিরাপদ শাক-সবজি উৎপাদনে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা প্রয়োগ করা, ফসলের উপকারি ও অপকারি পোকা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া, ক্ষতিকর কীটনাশকের পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার, জৈব সার বা কম্পোস্ট সার তৈরী ও এর ব্যবহার, বীজ সংরক্ষণ ও উন্নত বীজ ব্যবহারসহ নিরাপদ ফসল উৎপাদনে কৃষাণ-কৃষানীদের অবহিত করেন তিনি।
উপস্থিত কৃষক-কৃষানীদের মাঝে জনউদ্যোগের পক্ষে সিডলেস লেবু গাছের চারা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থিতিরে মাঝে মাস্ক ও শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। আলোচনা সভা শেষে স্থানীয় কৃষকরা জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুবের হাতে তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের নিরাপদ শাক-সবজি উপহার হিসেবে তুলেদেন। এসময় ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রণমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি) এর প্রোগ্রাম অফিসার মো. ইমতিয়াজ চৌধুরীসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইইডি’র বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, স্থানীয় শতাধিক কৃষক-কৃষানী ও বিভিন্ন গনমাধ্যমের সাংবাদিগন উপস্থিত ছিলেন।