শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্য বিধি মেনে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের সাহায্যে সমলয়ে বোরো ধানের চারা রোপন কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ১৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের মোজার বাজার এলাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নকলার আয়োজনে ট্রেতে রোপন করা ধানের চারা রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের সাহায্যে রোপন কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্বল্প ব্যয়ে কম বয়সী চারা লাগাতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের দিকে ঝুঁকছেন কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিসার (ইউএও) কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস-এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মো. বোরহান উদ্দিন এবং প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার (এইও) কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মনি’র সঞ্চালনায় এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত কৃষি অফিসার (এএও) কৃষিবিদ রোকসানা নাসরিন এবং বিশেষ অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সারোয়ার আলম তালুকদার ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোছা. ফরিদা ইয়াসমিন, উপজেলা কৃষকলীগের আহবায়ক ও উপজেলা ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি আলমগীর আজাদ, উপজেলা কৃষকলীগের যুগ্ম আহবায়ক মো. আব্দুল মান্নাফ খান প্রমুখ। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে স্থানীয় কৃষক হাজী কিতাব আলী ও মো. আব্দুল হালিমসহ অনেকে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধানের চারা রোপনের সুবিধাদির ওপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এসময় উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার (এসএপিপিও) ফকির মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, বানেশ্বরদী ইউনিয়নে কর্মরত উপসহকারী কৃষি অফিসার (এসএএও) মো. আশরাফুল আলম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শরিফ হোসেনসহ বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় কৃষক-কৃষাণী, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ ও এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার (ইউএও) কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন- রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের সাহায্যে সমালয়ে বোরো ধানের চারা রোপন কর্মসূচির বহুবিধ উন্নয়ন মূলক উদ্দেশ্য রয়েছে। এরমধ্যে কৃষকদের মধ্যে সমবায়ী মনোভাব গড়ে তোলা, স্বল্প সময়ে বোরো ফসল রোপন ও কর্তন, বোরো ফসল উৎপাদনে কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি করা, বোরো ফসলের চাষে আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করা, বোরো ফসল চালে শ্রমিক সাশ্রয় করে উৎপাদন খরচ কমানো, বোরো ফসল চাষে আধুনিক কলাকৌশল সম্পর্কে কৃষকদের সম্যক ধারণা প্রদান করা, কর্মসূচির আওতাভূক্ত ও পাশ্ববর্তী কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং সমলয়ে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করা উল্লেখযোগ্য।
রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধানের চারা রোপন কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি জানান, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধানের চারা রোপন পদ্ধতিটি দ্রুত ও অধিক কার্যকরী, এতে সময় ও শ্রম অনেক কম লাগে। এটি দিয়ে এক বিঘা জমিতে চারা রোপন করতে এক ঘন্টা সময় লাগে ও এক লিটার পেট্রোল জ্বালানী হিসেবে ব্যয় হয়। এতে করে সব খরচ মিলিয়ে ৩০০ টাকা ব্যায়ে এক বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপন করা সম্ভব। অথচ সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন করতে ৩ থেকে ৪ জন শ্রমিকের সারা দিন লাগে এবং রোপন ব্যয় হয় এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা। এ হিসাব মতে কৃষকদের ৩ থেকে ৪ গুণ রোপন খরচ কম লাগে এবং সময় ও শ্রমিকের হিসেব করতে গেলে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের কোন তুলনা নেই বলে অনেকে জানান।
ধানের চারার কোন প্রকার অপচয় হয়না, তাছাড়া চারা রোপনে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় থাকে, ফলে প্রতিটি চারা সমভাবে আলো, বাতাস ও খাবার পায়। কার্যকরী কুশির সংখ্যা বেশি হওয়ায় ফলন ভালো হয় ট্রে-তে চারা উৎপাদন করা হয় বিধায় প্রতিটি চারা সুস্থ-সবল হয়। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের সাহায্যে রোপনের জন্য যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ঘরোয়াভাবে চারা উৎপাদন করা সম্ভব এবং চারার বয়স ১৫ দিন থেকে ২০ দিনের মধ্যে রোপন করা যায়। তাই দিন দিন এই পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও রোপনের প্রতি কৃষকরে আগ্রহ বাড়ছে বলে জানান ইউএও কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২ টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন রয়েছে। কৃষিতে যন্ত্রপাতি ব্যবহার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের মোট মূল্যের ৫০ ভাগ তেকে ৭০ ভাগ ভূর্তকি দিয়ে কৃষকদের মাঝে বিক্রি করছে। এই কৃষিযন্ত্র’র সুবিধা ভোগ করছেন কৃষকরা। শুধু তাই নয় অল্প খরচে, স্বল্প সময়ে ও জনবলের চাহিদা মতো জমি চাষ করতে পারায় বীজতলা তৈরী, চারা উৎপাদন, রোপন, ধান কাটা, মাড়াই ও খড় সংগ্রহ সহ কৃষি কাজের সর্ব ক্ষেত্রেই এখন ব্যবহার করা হচ্ছে প্রযুক্তি।
বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বাংলাদেশেও এগিয়ে চলছে শিল্পায়ন। ফলে বাড়ছে কৃষি শ্রমিকের সংকট। বেশি উপার্জনের লক্ষ্যে শ্রমিকরা ঝুঁকছে নির্মাণ শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায়। এ কারণে কৃষি খাতে ব্যাপক শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে ধান রোপণ ও কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় যন্ত্রের ব্যবহারও বাড়ছে সমান তালে। কলের লাঙল ও ধান মাড়াই যন্ত্র বহুকালের পুরনো, এ দুটি যন্ত্রের বিকল্প নেই। তবে এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়েছে ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’। অল্প সময়ে অধিক জমিতে স্বল্প ব্যয়ে কম বয়সী চারা লাগাতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের জুড়ি নেই। যন্ত্রটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে এবং কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে কৃষি অধিদপ্তর নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান অনেক সুশীলজন, কৃষিবিদ ও কৃষকরা।