শেরপুর জেলার নকলা পৌর সভার নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীরা দোয়া ও ভোট প্রার্থনায় এবং কর্মী-সমর্থকরা ভোটারের দ্বারে দ্বারে ঘুরে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। মেয়র প্রার্থীরা সকলেই একেক দিকে জয়ের সুবিধা বিবেচনা করে নির্বাচিত হওয়ার আশায় নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
এ নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাফিজুর রহমান লিটন নৌকা প্রতীকে, বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত মো. এনামুল হক রিপন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় মনোনিত প্রার্থী ছাড়াও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পৌরসভার সাবেক মেয়র অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান নারিকেল গাছ প্রতীকে ও আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন আনার জগ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী ছাড়াও এ দল থেকে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় পূর্বে অনুষ্ঠিত হওয়া সংসদ নির্বাচনসহ উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার মতো অনাকাঙ্খীত ঘটনা গুলো মনে করিয়ে দিচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকসহ অনেকে জানান। তারা বলেন, এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ উপজেলা ও পৌর সভার নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করায় আকাশচুম্বী সমর্থন থাকা স্বত্ত্বেও আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থীকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিলো। তাই এ পৌরনির্বাচনে যেন ওই সকল অনাকাঙ্খীত ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে সোচ্চার হয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে ভুলে গিয়ে অতীতের সকল বুঝাবুঝি মিটমাট করে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে একাট্টা হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সকল নেতা-কর্মীরা।
এর অংশ হিসেবে পৌরসভা নির্বাচনে ১২ টি কেন্দ্রের প্রতি ৩টি কেন্দ্রের বিজয় নিশ্চিত করতে গঠন করা হয়েছে ৩টি প্রচার ও নির্বাচনী উপ-কমিটি। ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের আওতায় ৩টি কেন্দ্র এলাকার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলামকে প্রধান করে; ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের আওতায় ৫টি কেন্দ্র এলাকার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহকে প্রধান করে এবং ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের আওতায় ৪টি কেন্দ্র এলাকার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল খালেককে প্রধান করে এসকল উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসকল উপ-কমিটির প্রধানগনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা এলাকা ঘুরে ঘুরে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি বর্তমান মেয়রের পক্ষে পৌর এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ভোটারদের স্বত:স্ফূর্ত সমর্থন ও নির্বাচনী প্রচার কাজে তাদের অংশ গ্রহনের সুফলও দেখতে পাচ্ছেন সাধারন ভোটাররা।
৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের ৫টি কেন্দ্র এলাকায় নৌকা প্রতীকের প্রচার ও নির্বাচনী উপ-কমিটির প্রধান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ জানান, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সকল নেতা-কর্মীকে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে মাঠে কাজ কারার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা পেয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা রাত-দিন মাঠে নিরলস কাজ করছেন। তিনি বলেন- ৪ ওয়ার্ডের আওতায় জালালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫ নং ওয়ার্ডের আওতায় নকলা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও নকলা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ৬ নং ওয়ার্ডের আওতায় কুর্শা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নকলা বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত।
১, ২ ও ৩ নং কেন্দ্র এলাকায় নৌকা প্রতীকের প্রচার ও নির্বাচনী উপ-কমিটির প্রধান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ১ ওয়ার্ডের আওতায় মাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২ ওয়ার্ডের আওতায় ধুকুড়িয়া এ.জেড টেকনিক্যাল এন্ড বি.এম কলেজ ও ৩ ওয়ার্ডের আওতায় লাভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এলাকা গুলোতে আমরা সকলে মিলে কাজ করতেছি। এই ৩টি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাফিজুর রহান লিটন বিপুল ভোটে বিজয় হবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
৭, ৮ ও ৯ নং কেন্দ্র এলাকায় নৌকা প্রতীকের প্রচার ও নির্বাচনী উপ-কমিটির প্রধান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক বলেন, ৭ ওয়ার্ডের আওতায় মমিনাকান্দা আল আমিন দাখিল মাদ্রাসা, ৮ ওয়ার্ডের আওতায় কায়দা বালকা দাখিল মাদ্রাসা ও কায়দা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯ ওয়ার্ডের আওতায় কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এলাকার ভোটারদের কাছে কয়েক দফা যাওয়া হয়েছে। ভোটরদের মধ্যে অন্তত ৮০ ভাগ ভোটার নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদান করবেন বলে তিনি আশাবাদী।
উল্লেখ্য, নকলা পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ১৬০ জন, এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৮ জন ও নারী ভোটার ১৪ হাজার ১৫২ জন। ৯টি ওয়ার্ডের ভোটারদের সুবিধার্থে ১২টি কেন্দ্রের ৮১টি ভোটকক্ষের মাধ্যমে আগামী ৩০ জানুয়ারি শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন করা হবে।