নিজস্ব প্রতিনিধি:
করোনা ভাইরাস (কোভিট-১৯)-এর প্রভাবের কারণে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ১ জানুয়ারি বই উৎসব পালন করা না হলেও, শিক্ষা বর্ষের প্রথম দিনেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে সরকারি পাঠ্য বই বিতরণ করা শুরু হয়েছে। এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর হাতে প্রায় ৩৫ কোটি বই সপ্তাহে ৩ দিন করে পর্যায়ক্রমে ১২ দিন ব্যাপী বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।
প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরকারি (বিনামূল্যের) নতুন বই বিতরণ করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় শেরপুর জেলার নকলায় উপজেলার সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় আড়াই’শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকার কর্তৃক সরবরাহকরা বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা শুরু হয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে ১ জানুয়ারী শুক্রবার উপজেলার সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা, সংযুক্ত দাখিল মাদরাসা, মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বিভিন্ন কেজি স্কুলের উদ্যোগে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের মাঠে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা শুরু হয়।
এর অংশ হিসেবে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শতভাগ মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করে উপজেলার বানেশ্বরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বই বিতরণ কাজ উদ্বোধন করা হয়। এসময় স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ও পিটিএ কমিটির সাবেক সভাপতি আব্দুস ছাত্তার, কামাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও সহ-সুপার মাওলানা মো. আখতারুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সহকারী শিক্ষক মো. মোশারফ হোসাইন, সহকারী শিক্ষক মোসাম্মৎ রোকেয়া আক্তার, মাহবুব হোসাইন রূপম ও নুসরাত জাহান; সহকারী মৌলভী মাওলানা মো. রেজাউল করিম ও মাওলানা মো. ফজলুল করিম; ক্বারী শিক্ষক কাজীমদ্দিন, ইবতেদায়ী শিক্ষক মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান, জামাল উদ্দিন ও মো. কব্দুল হোসেন; খন্ডকালীন শিক্ষক উর্মি বেগম, মো. আবুল হোসেন ও আমীন মিয়াসহ অন্যান্য শিক্ষক ও প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে প্রাথমিক স্তরের মোট পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি বই প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য দুই কোটি ৫৯ লাখ ৯২ হাজার ৬৭১ টি; তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য ৬ কোটি ৯৬ লাখ, ৯৭ হাজার ৩৭৪ টি বই। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ২৭৫ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদ্রী) শিশুদের জন্য পাঁচটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ ১৩ হাজার ২৮৮টি বিশেষ ভাষায় বই বিতরণ করা হবে। তবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাদের ভাষায় শুধুমাত্র বাংলা বইটি পাবে। এ বছর সাঁওতাল ভাষায় পাঠ্যপুস্তক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তবে ৯ হাজার ১৯৬ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই বিতরণ করা হবে। তাছাড়া মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ২৪ কোটি ৩৩ লাখ ৩৪ হাজার কপি নতুন বইয়ের মুদ্রণ করার কাজ চলমান আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন শিক্ষা বর্ষের জন্য নতুন বই তুলে দিতে ৩১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সোয়া ১১টার সময় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বই বিতরণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র মিলনায়তনে মন্ত্রী ও সচিবদের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন প্রাথমিক পর্যায়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন। পাঠ কার্যক্রম যেন ঠিকমতো চলে সেজন্য শিক্ষা বান্ধব সরকার করোনার মধ্যেও এই পদক্ষেপ নিয়েছে। করোনার কারণে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপাতত বন্ধ থাকছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হলেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভর্তি ও অনলাইনে পাঠদান চলবে।
উল্লেখ্য, শিক্ষাকে মানসম্মত করার লক্ষ্যে এবং ঝরে পড়ার হার রোধ করতে ২০১০ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবছরের ১ জানুয়ারিতে উৎসবমুখর পরিবেশে ‘বই উৎসব’ পালন করে আসছে। গত ২০১০ সাল থেকে চলতি বছর (২০২০ সাল) পর্যন্ত এই ১০ বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে প্রায় ৩৩১ কোটি ৪৭ লাখ বই সারাদেশে বিতরণ করা হয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রভাবের কারণে এবার বই উৎসব করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু শিক্ষা বর্ষের শুরুরদিন থেকেই শিক্ষার্থীরা নতুন বছরে নতুন বই পাওয়ার আনন্দ উপভোগ করেছে।