মো. ওয়ালিদ হাসান। চাকরি করেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের অধীন কল সেন্টার সুখী পরিবারে। করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি বিবেচনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাননি। কিন্তু বাড়ি যাননি বলে যে ঈদুল ফিতরের এমন আনন্দঘন দিনে পরিবারের সাথে দেখা হবে না, তা তো হয় না। তাই সোমবার (২৫ মে) সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর তিনি ফেসবুক মেসেঞ্জারে ভিডিও কল দেন গ্রামের বাড়িতে। মা, বাবা, বড় বোনের সাথে ভিডিও কলে কথা বলেন, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর আপনজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশীসহ পরিচিতদের সাথে ভিডিও-অডিও কলে ভাগাভাগি করে নেন আনন্দ।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে ওয়ালিদের মতো অনেকেই গ্রামের বাড়িতে যেতে পারেননি এবার। অনেকে গ্রামে গেলেও অল্প দূরত্বে থাকা বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখাও করেননি। আবার অনেকেই রয়েছেন বিদেশে। দেশ-বিদেশ, অল্প-দূরে বহু-দূরে, কর্মস্থলে কিংবা গ্রামে থাকলেও দেশের মানুষের বড় অংশই এবার ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন ভার্চুয়ালি। কাছে-দূরে থাকা প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী, সবাই মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইভার, জুম মিটিংসহ বিভিন্ন অ্যাপে যুক্ত হয়েছেন।
শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনার কারণে এবার জাতীয় ঈদগাহ, শোলাকিয়া ময়দানসহ বড় বড় ময়দানগুলোতে ঈদের জামাত হয়নি। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে ঈদের জামাত আদায়ের সুযোগ থাকলেও তা করতে হয়েছে প্রত্যেক মুসল্লিকে তিন ফুট দূরত্বে কাতারবন্দী হয়ে। সেজন্য অনেকে বাসা-বাড়িতেই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। অনেকে ঈদের নতুন কাপড়-চোপড় পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করছেন। ঘরবন্দী এবারের ঈদ হয়ে উঠেছে অনলাইনময়।
ওয়ালিদ হাসান জাগোনিউজকে বলেন, ‘এবার আমার ঈদ অনেকটাই অনলাইনকেন্দ্রিক। ঘুম থেকে উঠে আপু, আম্মু, আব্বুর সাথে মেসেঞ্জারে ভিডিও কলে কথা বলি। তারপর বন্ধু-বান্ধবের সাথে কথা বলি। চরম আতঙ্কের মধ্য দিয়ে সময় যাচ্ছে বলে যেখানে আছি, সেখানে থাকাটাই আমার কাছে নিরাপদ মনে হয়েছে। তবে ভিডিও কলের সুযোগ থাকায় পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দেখা হয়েছে।’
একটি এনজিওতে কাজ করা ইব্রাহীম খলিল নামে আরেকজন বলেন, ‘করোনার কারণে গ্রামে যাইনি। তাই পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষকের সাথে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে ভিডিও কলে কথা বলেছি। তাছাড়া আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী, সাবেক সহকর্মী, পরিচিতদের সাথেও ফোনে কথা হয়েছে।’
ঈদের সাজে নিজের ছবি পোস্ট করে ইমামুল হাছান আদনান নামে একজন ফেসবুকে লেখেছেন, ‘ঈদের নামাজের ইমামতি করলাম। খুতবাও দিলাম। মা-বাবা, ভাই-ভাবি, ভাতিজিকে নিয়ে আরশের মালিকের কাছে হাত তুললাম। কয়জন সন্তানের এ সৌভাগ্য হয়! আমরা ভাগ্যবানদের কাতারেই থাকলাম। করোনা আমাদের কত কিছুই না শেখালো।…ঈদ মোবারক।’
একই উপজেলার হলেও অনেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে মেসেঞ্জার ভিডিও কলে মিলিত হয়েছেন। যেমন প্রতি ঈদে এক হলেও এবার ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার ল্যাংড়া বাজার এলাকার এনামুল হক, একই উপজেলার রাজাবাড়ী গ্রামের আলমগীর হোসেন ও শিবরামপুর গ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম মেসেঞ্জারে ভিডিও কলে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। তারা বলছেন, এই বিপদ কেটে গেলে আগামী ঈদে হয়তো তারা একসাথে কোথাও দেখা করতে পারবেন।
এছাড়া গতকাল রোববার (২৪ মে) থেকে অনেকেই ফেসবুকে, মেসেঞ্জারে লেখে, স্টিকার পোস্ট করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।